সমতাধর্মী বাজেট করার আগে রাজনৈতিক অর্থনীতি ঠিক করতে হবে
প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাধর্মী সমাজ তৈরির লক্ষ্য এবারের বাজেটের। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশে প্রবেশ করেছে বলে সরকার দাবি করছে। যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, তাই সরকারি খাতে বিনিয়োগ কতটুকু বেড়েছে, সেটা না দেখে বলা যাবে না আসলেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হয়েছে কিনা।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বিনিয়োগ ছিল। এখন সরকারি খাতে সে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ২২ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও এটি ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, নাকি ২১ শতাংশ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সব মিলিয়ে মাত্র ২৯ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে যদি ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দাবি করা যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের গড়ে ৪ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাত্ ক্যাপিটাল আউটপুট রেশিও হচ্ছে ৪: ১।
আমাদের এক সময় ক্যাপিটাল আউটপুট রেশিও ৩:১ ছিল। তার পর এটা কমতে কমতে ৪:১, ৫:১-এ পরিণত হয়েছে। আগের বার ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা প্রায় ২৯ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে যেহেতু সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, সুতরাং এখন ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কেমন করে হচ্ছে, এ প্রশ্নটা যে কেউ তুলতে পারেন। কারণ ক্যাপিটাল আউটপুট রেশিওর কিছুটা উন্নতি ছাড়া এটা হতে পারে না। কিন্তু পুঁজির উত্পাদনশীলতা বেড়েছে এটা খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য কথা হবে না অর্থনীতিবিদদের জন্য।
কিন্তু প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫-এর বেশি, অর্থাত্ গতবারের চেয়ে বেশি হয়েছে এটা সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই প্রবৃদ্ধি নিয়ে বেশি হৈচৈ করে লাভ নেই। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধিও এ রকমই। সুতরাং আমরা যে খুব অফট্র্যাকে রয়েছি, তা বলা যাবে না। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এটা সত্য কিন্তু সরকার যেভাবে বলছে— বৃত্ত ভেঙে ৭-এ পৌঁছেছি, আবার এ বৃত্ত ভেঙে ৮-এ পৌঁছাব। বিনিয়োগ পরিসংখ্যান দেখলে এমন উচ্ছ্বাস করার কোনো কারণ দেখি না। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের অবস্থা বেশ খারাপ। বেসরকারি খাত বারবার বলছে, তাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্, পানি, গ্যাস, জমি নাই। সুতরাং তারা বিনিয়োগ করতে তেমন উত্সাহ পাচ্ছেন না। এছাড়া যত দিন স্থানীয়রা বিনিয়োগ করছেন না, ততদিন বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও উত্সাহিত হবেন না—এটাই স্বাভাবিক।
অর্থের অভাবের কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। অর্থ মানুষের কাছে রয়েছে, প্রচুর অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব এবং আস্থাহীনতা বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে। বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়। বিনিয়োগের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত হতে পারছে না। কয়েক বছর পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে দেশবাসী ও ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত নন। ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করতে হলে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনের যে চেহারা দেখা গেছে, সে চেহারার মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। এ মৌলিক পরিবর্তন আনা হলে তখন ফলাফল অনিশ্চিত হয়ে যাবে। সুতরাং কোনো বুদ্ধিমান লোক আগামী নির্বাচনের চেহারাটা না দেখে বিনিয়োগ করবে বলে মনে হয় না। এ কারণেও বিনিয়োগ হচ্ছে না।
সবকিছু মিলিয়ে চিন্তা করলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, এ কথাটা মেনে নিলেও ৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নিশ্চিতভাবে তরতর করে এগিয়ে যাবে, তা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সুতরাং প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি উচ্ছ্বাসের কোনো কারণ নেই। এছাড়া বামপন্থী অর্থনীতিবিদরা সবসময় বলছেন যে, প্রবৃদ্ধি মূলকথা নয় বরং প্রবৃদ্ধির ফল সবাই পাচ্ছেন কিনা, সেটাই আসল প্রশ্ন। প্রবৃদ্ধিটা কি কর্মসুযোগ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে পারছে?
প্রস্তাবিত বাজেটের একটি মৌলিক প্রশ্ন— সমতার প্রশ্নে আসা যাক। সমতা অর্থাত্ সকলের সমসুযোগের প্রশ্ন। একটি শ্রেণীবিভক্ত সমাজে কখনো সমসুযোগ থাকবে না। যার অর্থ ও লোকবল বেশি, তার ক্ষমতা বেশি থাকবে; অন্যদিকে যার এগুলো নেই তার ক্ষমতাও নেই। তাই আমাদের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে নিখুঁত সমতার প্রশ্নটা অবান্তর। সমতা নেই বললেই চলে। সুতরাং সরকার যদি এখানে সমতা আনতে চায়, তবে তাকে শুরুতেই সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, সম্পদের পুনর্বণ্টন করতে হবে।
দুই ধরনের সম্পদের কথা আমরা জানি, একটি ম্যাটেরিয়াল এনডাওমেন্ট বা বস্তুগত সম্পদ। যেমন— ভূমি ও মূলধন এবং অন্যটি পারসোনাল এনডাওমেন্ট। যেমন— শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সমতা বিধান করাও এক ধরনের প্রাথমিক সমতা আনার পথ। যদি সবাইকে সুশিক্ষিত করা যেত, সবার জন্য ন্যূনতম খাবার ও সুচিকিত্সা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে আমরা একটি মোটা দাগের সমতাধর্মী সমাজ পেতাম, অন্তত পারসোনাল এনডাওমেন্টের ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যেত। ম্যাটেরিয়াল এনডাওমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো রেডিক্যাল সলিউশন ছাড়া সমতা নিশ্চিত করতে পারব না। অবশ্য ‘অর্থায়নের’ ক্ষেত্রে আমরা যদি একটি ইউনিভার্সাল ক্রেডিট সিস্টেম করতে পারতাম, তবে হয়তো কোনো টোটকা পথ পাওয়া যেত। ড. ইউনূস এ লাইনেই কথা বলেন, তার স্লোগান হচ্ছে— ‘ক্রেডিট ইজ এ হিউম্যান রাইট’। এমন যদি করা যেত যেমন একজন কৃষক তারও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে, একজন শ্রমিক তারও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে, অর্থাত্ সে ঋণ পায়। তাহলে হয়তো অর্থায়নের ক্ষেত্রেও কিছুটা সমতাবিধান হতো। কিন্তু এক্ষেত্রে এসব জায়গাতে বিপুল প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের একটি ভালো দিক হলো শিক্ষা খাতে আগের অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যদিও এটা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ (১৪ দশমিক ৭ শতাংশ) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা খাতে ৪৯ হাজার কোটি টাকা একটা বড় উল্লম্ফন। শিক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশ সবসময়ই কম-বেশি ছিল। এখন ১৯ লাখ কোটি টাকার জিডিপি হিসাবে শিক্ষা বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আপেক্ষিক ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং মোট ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার একটি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এ পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়। তবে এ পদক্ষেপ বজায় রেখে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে আস্তে আস্তে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রথমে জিডিপির ৪ শতাংশ, পরে ৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে বিপুল পরিমাণে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সমতার বিষয়ে এ বাজেট একটি ইতিবাচক সূচনা দেখিয়েছে। আমরা তখনই বলতে পারব যখন এ কথা প্রমাণ করা যাবে যে, এই বর্ধিত ব্যয়ের বেশি অংশ নিচের মানুষদের জন্যই সঞ্চালিত হয়েছে।
কিন্তু ঋণের ক্ষেত্রে যে কেলেঙ্কারিগুলো হয়েছে, ব্যাংকগুলো থেকে পাঁচ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, সে সব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু নেই। বাজেটে সুশাসনের একটি অধ্যায় রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের এ কেলেঙ্কারিগুলোর ক্ষেত্রে কিভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে, সে ব্যাপারে খুব সামান্য কথা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমরা জানি বর্তমান সরকারই বোর্ডে রাজনৈতিক লোকজন ঢুকিয়ে ছিল এবং তাদের তত্ত্বাবধানেই এ সংকটগুলো তৈরি হয়েছে। এখন তিনি সেইসব লোককে পরিবর্তন করে আবার পেশাদার লোক বসিয়েছেন এবং এ কৃতিত্বই তিনি এ বাজেটে নিয়েছেন। কিন্তু শুধু অপরাধীদের সরিয়ে নিলে তো হবে না, তাদের শাস্তিও দিতে হবে। যারা অপরাধ করেছে, তাদের মধ্যে শুধু কি রাজনৈতিক লোক ছিল তা তো নয়। ব্যবসায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তা, ধনী ব্যক্তিরাও ছিল। সব মিলিয়ে সরকারের উচিত ছিল একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা। সেখান থেকে সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া। পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপরাধ করে কেউ ক্ষমা না পায় তার ব্যবস্থা করা। এ বিষয়টি হয়নি, তাই এখানে সুশাসনের সমস্যাটা রয়েই গেছে।
সুশাসনের ক্ষেত্রে সরকারের কতগুলো মৌলিক ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। নিজের দলের লোক হলে তার অপরাধে এক রকম নরম আচরণ করা হচ্ছে, অবার একই অপরাধে অন্য দলের লোকের প্রতি অনেক কঠোর আচরণ করা হচ্ছে। এ দ্বৈততা দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বিচারকের চোখ যেমন বন্ধ থাকে, ওইভাবে চোখ বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। শ্যামল কান্তির ঘটনাতে শাস্তি সরকার এখনো দিতে পারছে না। অপরাধী যে দলেরই হোক, নিজ বা অন্য, তার কঠোর শাস্তির বিধান করা হবে— যতক্ষণ না সরকার এ সিগন্যাল দিচ্ছে ততক্ষণ সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন ও হতাশা থেকেই যাবে।
সমতার প্রশ্নে বহুমুখী মাত্রা রয়েছে— ন্যায়বিচারের সমতা, ব্যাংকিং খাতে ঋণের সমতা এবং সর্বশেষ ভূমি ও সম্পত্তি রক্ষার সমতা। ভূমি ও সম্পত্তির সমতা সরকার করতে পারছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে। আমি যতদূর জানি, হবিগঞ্জ এলাকায় আদিবাসীদের কৃষিজমি দখল করে সেখানে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এটা হয়তো সরকারের নীতি নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কৃষিজমি নেয়া যাবে না। কিন্তু কৃষিজমি তো নেয়া হচ্ছেই এবং নেয়া হচ্ছে যে সবচেয়ে দুর্বল তার কাছ থেকে। বাঁশখালিতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এস আলম গ্রুপ মানুষের জমি নিয়েছে কিন্তু সঠিক দাম দেয়নি। এর ফলে একটি প্রকল্পই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সেখানে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুেকন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা রয়েছে। সেখানকার জনগণই বলেছে, এতে তাদের কোনো আপত্তি ছিল না যদি ভূমি অধিগ্রহণের সময় ঠিক টাকাটা দেয়া হতো। আমরা সমাজে কতগুলো ক্ষমতাবান মানুষের দাপট দেখছি, তা চুরির ক্ষেত্রেও দেখি, লুণ্ঠনের ক্ষেত্রেও দেখি, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রেও দেখি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই দেখা গেছে। এ জায়গাগুলো যতক্ষণ সুশাসনের আওতায় না আসছে ততক্ষণ সমতার আবহাওয়া তৈরি হবে না এবং বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশও সৃষ্টি হবে না। এবারের বাজেটে প্রায় সব ইস্যুর কথাই বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এবার সতর্কতার সঙ্গে যে যা বলতে পারেন, সেগুলো চিন্তা করেছেন এবং সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি করে অধ্যায় রেখেছেন। কিন্তু এগুলো থেকে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, যা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন হবে। এ বিশাল বাজেটের যে অঙ্ক তা সঞ্চালন করার ক্ষমতা সরকারের নেই।
আমার আশঙ্কা, সরকার যদি সম্পদ সঞ্চালন করতে না পারে তখন তাকে বাজেট সংশোধন করতে বা কাটতে হবে। বাজেট সংশোধনের সময় মেগা প্রজেক্টের বাজেট কাটতে পারবে না সরকার। কারণ এগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুত, যেমন পদ্মা সেতু, এটি যেভাবেই হোক করা হবে। তখন অন্যগুলোর প্রতি নজর দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের আকার কি দাঁড়ায় তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে কৃষি বাজেটের অবস্থা এবার খুব খারাপ এবং খুবই কম। আমার মনে হয়, এ খাতে আরো বরাদ্দ দেয়া উচিত ছিল। শিল্প বাজেটে বরাবরই কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর পেছনে একটি যুক্তি হতে পারে যে, সব শিল্প তো বেসরকারি খাতের হাতে চলে গেছে!
আর কর আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার যেসব নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে ভ্যাটের প্রস্তাবটা সরকার প্রথমে নিলেও পরে পিছিয়ে এসেছে। আমার পরামর্শ ছিল, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আগের ভ্যাট সিস্টেমই থাকুক, কিন্তু বাকিদের ওপর ১৫ শতাংশ করে ভ্যাট আদায় করা যেতে পারে। এতে করে সরকার কিছুটা বাড়তি অর্থ আদায় করতে পারত। অন্যদিকে আগের চেয়ে প্রত্যক্ষ করের অনুপাত সরকারের মোট রাজস্বে বেড়েছে। আগে ২০ শতাংশ ছিল, এখন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। সরকার ঘোষণা করেছে, এটিকে ৫০ শতাংশ করবে। এটা করতে হলে আয় কর, সম্পদ কর ও কালো টাকা থেকে জরিমানা আদায় ঠিকমতো করতে হবে। আমার ধারণা, এগুলোর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত, রাজনৈতিক ক্ষমতার শ্রেণীভিত্তির প্রশ্ন জড়িত। সুতরাং রাজনৈতিক অর্থনীতি ঠিক না করে সমতাধর্মী বাজেট করা যাবে না।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Source Link: https://goo.gl/DKHVgQ
Source: Daily BonikBarta
Updated Date: 8th March, 2017