ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (৭ ডিসেম্বর ২০১৫)

নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বলে  পত্রিকায় প্রচারিত সংবাদ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য 

 ব্সম্প্রতি কোন কোন দৈনিক ও সংবাদপত্রে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বলে কিছু বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ক্যাবিনেট মিটিংয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেছেন বলে পত্রিকাগুলো জানায়।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সোমবার সাপ্তাহিক ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার সময়ে মন্তব্য করেন যে, “নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ইউনূস হিলারী ক্লিনটনের পরবর্তী মার্কিণ প্রেসিডেন্ট হবার আশায় আছেন, যাতে তিনি হিলারীর সহায়তায় তাঁর সরকারের জন্য ‘সমস্যা তৈরী করতে’ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারেন।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের কল্পনাপ্রসূত ও ভিত্তিহীন মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল মহল থেকে এ ধরনের বক্তব্য শুধু দায়িত্বহীন ও অযাচিতই নয়, দু’টি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক রক্ষা ও উন্নতির পথেও তা অন্তরায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত ও বাস্তবতা-বিবর্জিত কথাবার্তা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না বলে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বাস করেন।

পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রফেসর ইউনূস এই মূহুর্তে আমেরিকায় আছেন যেখানে বসে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী যখন একথা বলছিলেন সে সময়ে প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশেই অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রে বসে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ কেবল মিথ্যাচারই নয, দুর্ভাগ্যজনকও।

হিলারী ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁর সহযোগিতায় প্রফেসর ইউনূস সমস্যা তৈরীর কাজে লিপ্ত--পত্রিকায় প্রচারিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য একটি শক্তিশালী দেশের একজন সম্মানিত নেতার প্রতি বিশেষ অসম্মানসূলভ। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এখনো পুরো এক বছর বাকী এবং হিলারী এখনো এই নির্বাচনে তাঁর নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। “তিনি মার্কিণ যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট হলে প্রফেসর ইউনূস তাঁর সাথে এক হয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত”, প্রধানমন্ত্রীর এই তত্ত¡ নিছক কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের একজন প্রথম সারির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমাদের দু’দেশের সম্পর্কে নিশ্চয়ই কোন শুভ সূচনা করবে না। এ ধরনের মন্তব্য কতটুকু কূটনৈতিক শিষ্টাচারসম্মত সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

ক্যাবিনেট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী নাকি প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও করেছেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেবার পর থেকে প্রফেসর ইউনূস ক্রমাগতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন এবং বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিলের পেছনে তাঁর হাত ছিল।

 

প্রফেসর ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এবং পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাতিলের পেছনে তাঁর হাত ছিল--প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বলে এ ধরনের সংবাদ পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে এবং ইউনূস সেন্টার থেকে প্রতিবারই এর জবাবও দেয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন এবং প্রফেসর ইউনূস সবসময়ই এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে তিনি আনন্দিত। ফলে হিলারী ক্লিনটনের প্রভাব খাটিয়ে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল করার প্রশ্নই আসে না। প্রফেসর ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের মানুষের ¯া^র্থের পরিপন্থী কোন কিছু করেননি, করতে পারেন না। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে তাঁর সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর কাজ ও অবদান সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে এবং নোবেল পুরষ্কারসহ অগণিত স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থ ও সাফল্যের জন্য কাজ করেছেন এবং এই দেশকে উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের একটি মডেল হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন বা করেছেন, এ ধরনের কোন কথা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। কিন্তু দুঃখজনক যে, কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা বার বার বলে আসছেন।

কোনরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়া প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের মত একজন সম্মানিত ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বলে বার বার যেসব নেতিবাচক কথা প্রচারিত হচ্ছে তাতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, কারণ এই বক্তব্যগুলো শুধু অসত্যই নয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিতও। আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষেই এ ধরনের কোন মন্তব্য করেননি; তবে যেহেতু বক্তব্যগুলো তাঁরই নামে প্রচারিত হচ্ছে, তাই ইউনূস সেন্টার থেকে প্রতিবারই আমরা এর জবাব দিয়ে আসছি। দুঃখজনক যে, প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসব অভিযোগের স্বপক্ষে কখনোই কোন তথ্য-প্রমাণ উপস্থিত করা হয়নি। অথচ একই অভিযোগ বার বার করা হচ্ছে। আর এতে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে, হিলারী মার্কিণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে (কারণ তিনি ইউনূসের বন্ধু!)।

আমরা আগেও বলেছি, দেশের জন্য এবং প্রফেসর ইউনূসের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য আছে। এগুলো দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে, দেশ ও দেশের মানুষের মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। আমরা আরো আগেই এই ধরনের অভিযোগের বিস্তারিত জবাব দিয়েছি। আমাদের বক্তব্য মিডিয়াতে সবিস্তারে প্রচারও করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক যে, আমাদের সেসব বক্তব্য বিবেচনায় না নিয়ে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর পক্ষ থেকে একই অসত্য অভিযোগ বার বার করা হ”ে

Source Link:

Source: Yunus Centre

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications