বার্লিনে ৭ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলন শুরু
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (৪ নভেম্বর ২০১৫):
গত ৪ নভেম্বর জার্মানীর বার্লিনে ৭ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলন ২০১৫ শুরু হয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৫ সালের সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় দারিদ্র ও বেকারত্বমূক্ত বিশ্ব তৈরী। ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব জার্মানীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রাইভেট সেক্টর, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন সরকার ও শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণের জন্য কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সভা, ফোরাম ও কর্মশালায় মিলিত হচ্ছেন। সম্মেলনের অব্যবহিত পূর্বে নির্বাচিত অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে সোশ্যাল বিজনেস অ্যাকাডেমিয়া কনফারেন্স ও ইয়ং চ্যালেঞ্জার্স মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
চিকিৎসাগত প্রয়োজনে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এ বছরের শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে যোগদান করতে পারেননি। সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রেরিত একটি ভিডিও বার্তায় প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, নিরাশ হবার জন্য আমাদের হাতে সময় নেই; আমি নিশ্চিত যে, এই সম্মেলনকে আপনারা স্মরণীয় করে তুলবেন। আমি শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পারলেও আমি আত্মিকভাবে এই বৈশ্বিক সম্মেলনে আপনাদের সঙ্গে আছি।
ভিডিও বার্তায় প্রফেসর ইউনূস আরো বলেন যে, ৩টি বিষয়ে “শুণ্য” অর্জনের--শুণ্য দারিদ্র, শুণ্য বেকারত্ব ও শুণ্য কার্বণ নিঃস্বরণে--বৈশ্বিক লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন যে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বকে এই ৩টি বিষয়ে “শুণ্য” লক্ষ্য অর্জনের নীতি গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো নিশ্চিত করতে আমাদের ৪টি জিনিষ প্রয়োজন: ক) তারুণ্যের শক্তি ও সৃষ্টিশীলতা, খ) প্রযুক্তির ক্ষমতা, গ) সামাজিক ব্যবসা, ও ঘ) সুশাসন। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘ দিনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোকে টেকসইভাবে সমাধান করতে হলে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজের সৃষ্টিশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন সামাজিক ব্যবসার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে পৃথিবী ব্যাপী সামাজিক ব্যবসার চর্চাকারী ও সমর্থকরা প্রতি বছর একত্রিত হন। সামাজিক ব্যবসা ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, এ বিষয়ে আলোচনা ও সহযোগিতা তৈরী এবং বিশ্ব ব্যাপী শ্রেষ্ঠ সামাজিক ব্যবসা কর্মকান্ডসমূহ ও এ সংক্রান্ত নতুন নতুন আইডিয়াগুলো সর্বসমক্ষে তুলে ধরা এই সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য। এই শীর্ষ সম্মেলন সমাজের জরুরী অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো--যেমন বেকারত্ব, দারিদ্র ইত্যাদি-- সমাধানের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা, পারষ্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা তৈরীর জন্য একটি চমৎকার সুযোগ তৈরী করে এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্ভাবনশীল উপায় খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হন।
এ বছরের সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় ৬০টি দেশ থেকে ৮০০-র বেশী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগসমূহ তাদের কর্মকান্ড সরাসরি তুলে ধরছে। এরা সামাজিক ব্যবসা প্রদর্শণীতেও অংশ নিচ্ছে এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনশীল ধারণাকে ব্যবসায়িক উপায়ে সমাধানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণসহ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সফল ও কার্যকরভাবে সমাধানের দৃষ্টান্তগুলো সকলের সামনে উপস্থাপন করছে। সম্মেলন অনুষ্ঠানে আরো অন্তর্ভূক্ত রয়েছে প্লেনারী ও ফোকাস গ্রæপ আলোচনা। ৬৬ জনের বাংলাদেশ টীমের মধ্যে রয়েছেন গ্রামীণ পরিবারেরসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসার প্রধান নির্বাহীবৃন্দ।
বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুর পাশাপাশি সাম্প্রতিক উদ্বাস্তু সমস্যা এবং এর সমাধানও এই সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। উল্লেখ্য যে, ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশেষ করে সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাক থেকে আগত হাজার হাজার উদ্বাস্তু বর্তমানে পৃথিবীর একটি অন্যতম আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
ছবি-১ঃ ৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে জার্মানীর বার্লিনে শুরু ৭ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলনে ৬০টি দেশ থেকে আগত আট শতাধিক অংশগ্রহণকারী নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ভিডিও বার্তা শুনছেন।
ছবি-২ঃ ৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে জার্মানীর বার্লিনে শুরু ৭ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভামঞ্চে ইউনূস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী লামিয়া মোর্শেদ ও গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব জার্মানীর হ্যান্স রীজ।
ছবি ৩: ৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে জার্মানীর বার্লিনে শুরু ৭ম বিশ্ব সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন কয়েকজন সিরিয়ান রিফিউজি।
Source: Yunus Centre
Updated Date: 9th March, 2017