যুব-বেকারত্ব বিষয়ে ড. ইউনূসের পরামর্শ নিলেন ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী

10th September, 2018

যুব-বেকারত্ব বিষয়ে ড. ইউনূসের পরামর্শ নিলেন ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী

প্রেস রিলিজ

ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী লুইজী ডি মাইও যিনি ইতালি সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রম ও সামাজিক নীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বপ্রাপ্ত, নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। উল্লেখ্য যে, এ বছরের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ইতালির জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দল ফাইভ স্টার ইতালির আর সব পুরোনো দলকে পরাজিত করে। পুরোনো দলগুলোর নীতি বর্জনের উপর ভিত্তি করে ফাইভ স্টার তার প্লাটফর্ম গড়ে তোলে। প্রফেসর ইউনূসের অর্থনৈতিক নীতি-দর্শনকে দলটি তার প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে। প্রফেসর ইউনূসের সাথে আলোচনাকালে ৩২ বছর বয়সী এই নেতা বলেন যে, তাঁর প্রজন্ম প্রফেসর ইউনূসের কর্ম ও দর্শনে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ। রোমে উপ-প্রধানমন্ত্রীর সরকারী দপ্তরে ৯ সেপ্টেম্বর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য যে, এ বছরের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ইতালির জাতীয় নির্বাচনের পর ইতালির প্রেসিডেন্ট, নব-নির্বাচিত পার্লামেন্টের স্পীকার, রোমের মেয়র ও টোরিনোর মেয়র প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

উপ-প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রফেসর ইউনূসের আলোচনায় তরুণদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করে যুব-বেকারত্ব সমস্যার সমাধানের উপর বিশেষভাবে আলোচনা হয়। তরুণদেরকে মূলধন সরবরাহ করতে জাতীয় পর্যায়ে একটি সোশ্যাল বিজনেস ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গঠন নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেন। ডি মাইও বলেন যে, তিনি নাপল্সের অধিবাসী যেখানে তরুণদের ৬০ শতাংশই বেকার। তিনি দুঃখের সাথে বলেন যে, ইতালির মত একটি ধনী দেশ তার নিজের তরুণদের কর্মসংস্থান করতে পারছে না।

প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের জন্য কীভাবে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। প্রফেসর ইউনূস দরিদ্রদের জন্য ব্যাংক তৈরীর উদ্দেশ্যে পৃথক আইন প্রণয়নের উপর জোর দেন। ইতালীয় নেতা এ ধরনের আইন তৈরীতে প্রফেসর ইউনূসের সহায়তা চান। তাঁরা সামাজিক ব্যবসা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন এবং ইতালির ব্যবসায়ী নেতাদের কীভাবে সামাজিক ব্যবসা তৈরী ও সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনে আকৃষ্ট করা যায় এ বিষয়ে বিশেষভাবে কথা বলেন। প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন যে, তিনি ইতোমধ্যে দক্ষিণ ইতালিতে অবস্থিত বাসিলিকাতার ৫ হাজার বছরের পুরোনো নগরী মাতেরা-তে একটি সোশ্যাল বিজনেস ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গঠন বিষয়ে বাসিলিকাতার প্রাদেশিক সরকারের সাথে কাজ করছেন। বাসিলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাতেরা ক্যাম্পাস সামাজিক ব্যবসার উপর শিক্ষাদান ও গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য একটি ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। তরুণ সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে সামাজিক ব্যবসার তত্ত্ব কীভাবে জনপ্রিয় করা যায় এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের অর্থ কীভাবে সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা তা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেন।

ডি মাইও বলেন যে, তাঁর দল সকল বেকার মানুষের জন্য নিশ্চিত মৌলিক আয়ের ব্যবস্থা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি এ বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসের মতামত জানতে চান। প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, তিনি বরাবরই দরিদ্রদের  সমস্যা মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় দান-দাক্ষিণ্যের বিপক্ষে। এতে সমস্যার প্রকৃত সমাধানের পরিবর্তে বরং সমস্যাকে আড়াল করে রাখা হয়। এতে নির্ভরতার সৃষ্টি হয় যেখানে আমাদের কর্মপন্থা হওয়া উচিত মানুষের সৃষ্টিশীল সক্ষমতাকে বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। তিনি আরো বলেন যে, তিনি বরং আর্থিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করার পক্ষপাতী। তাঁরা উভয়েই তাঁদের আলোচিত বিষয়গুলো এবং এসব বিষয়ে গৃহীত বাস্তব কর্মপন্থাগুলো ফলো-আপ করতে একমত হন।

তাঁদের বৈঠকের বিষয়টি ইতালির নেতৃস্থানীয় সংবাদপত্রসমূহে প্রচারিত হয়।

উপ-প্রধানমন্ত্রী লুইজী ডি মাইও-র সাথে বৈঠকের পর প্রফেসর ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১-এর ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোম থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে আমালফি সৈকতে অবস্থিত স্কালা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। স্কালা ও নিউ ইয়র্কের মধ্যকার একটি সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে। নগরীর মেয়রের নেতৃত্বে ও ইটালির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ও মূল ভাষণ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় বিশ্বখ্যাত গায়ক ও অভিনেতা আলবানো কাররিসি-র একটি কনসার্টের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ প্রফেসর ইউনূস ও আলবানোর পোষ্টারে পুরো শহর ছেয়ে গিয়েছিল।


---

Related Contents