জাতি সংঘের আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেলের সাথে “জিরো ওয়েস্ট প্রোগ্রাম” নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের বৈঠক

13th May, 2023

জাতি সংঘের আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেলের সাথে “জিরো ওয়েস্ট প্রোগ্রাম” নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের বৈঠক

ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (১৩ মে, ২০২৩ )

 

নাইরোবী, ১০ মে ২০২৩

 
জাতি সংঘের আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল ও ইউএন-হাবিট্যাট (জাতি সংঘ হিউম্যান সেটলমেন্ট প্রোগ্রাম)-এর নির্বাহী পরিচালক মিস মাইমুনাহ মোহামেদ শরিফ এবং নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এর মধ্যে জাতি সংঘের “জিরো ওয়েস্ট প্রোগ্রাম” নিয়ে গত ১০ মে ২০২৩ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবীতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 
আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে জিরো ওয়েস্ট প্রোগ্রাম বা শূন্য-অপচয় কর্মসূচির লক্ষ্য অর্জনে জাতি সংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জাতি সংঘের জিরো ওয়েস্ট ক্যাম্পেইনের অ্যাডভাইজরী বোর্ডে প্রফেসর ইউনূসকে স্বাগত জানান। উল্লেখ্য যে, জাতি সংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস সম্প্রতি নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ইউনূসকে জাতি সংঘের “অ্যাডভাইজরী বোর্ড অব এমিনেন্ট পার্সন্স অন জিরো ওয়েস্ট” -এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে প্রফেসর ইউনূস কেনিয়ায় সোশ্যাল বিজনেস জিরো ওয়েস্ট ফান্ড” গঠনের প্রস্তাব দেন যার মাধ্যমে “শূন্য অপচয়”-এর লক্ষ্য অর্জনে গ্রাম, শহর, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে টেকসই ও আত্মনির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা উদ্যোগ গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে বিশেষ করে তরুণ নারী ও পুরুষদেরকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিরো ওয়েস্ট কোম্পানী সৃষ্টি এবং নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি তরুণদের “থ্রি-জিরো ক্লাব”-এর মাধ্যমে নিজেদেরকে “থ্রি-জিরো পার্সন”-এ রূপান্তরিত করার তাঁর উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, কেনিয়ায় “সোশ্যাল বিজনেস জিরো ওয়েস্ট ফান্ড” সফল হলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অনুরূপ ফান্ড গড়ে তোলা যাবে। একটি দেশেই এধরনের একাধিক কর্মসূচি থাকতে পারে যারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে। তরুণরা যাতে সফলতার সাথে নিজেদের উদ্যোগগুলি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য এই ফান্ডগুলি পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ সহায়তার ব্যবস্থাও করবে।

 
ইউএন-হাবিট্যাটের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভাইজরী বোর্ডের সকল সদস্যর জন্য তাঁর সংস্থা থেকে একক ও যৌথ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন যে, হাবিট্যাট-এর স্মার্ট সিটি তৈরীর কর্মসূচি এবং জাতি সংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন সংক্রান্ত হাবিট্যাট-এর কর্মসূচিগুলি ডিজাইন করা হয়েছে প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণের তত্ত্ব ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। স্মার্ট সিটি তৈরীর ক্ষেত্রে শুধু প্রযুক্তি নয়, ‘মানুষ’কে আগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এসডিজি শহরগুলি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও স্থানীয় তহবিলের দ্বারা স্থানীয় সমস্যাগুলির সমাধানের উপর জোর দেয়া হচ্ছে।

 
উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূসকে জাতি সংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে, যেমন এসডিজি শীর্ষ সম্মেলন, ওয়ার্ল্ড হাবিট্যাট ডে, ইউএন সামিট অন ফিউচার ইত্যাদি। এই অনুষ্ঠানগুলি আগামী বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শুরু হবে। আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল এ বছরের জুলাইতে মালয়েশিয়ার লানকাওয়িতে অনুষ্ঠেয় সোশ্যাল বিজনেস ডে’ ২০২৩ -এ অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেন যেখানে বিশ্ব ব্যাপী সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সমবেত হবেন।

 
আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল মিস মাইমুনাহ শরিফ ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ইউনূস উভয়েই তিন মহাদেশের তিনটি দেশকে বিভিন্ন পরিবেশগত ইস্যু এবং এগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে কেইস স্টাডি হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই দেশগুলিকে কেন্দ্র করে কাজ করতে একমত হন। এই দেশগুলি হলো ব্রাজিল, কেনিয়া ও মালয়েশিয়া। প্রফেসর ইউনূস কর্পোরেট বিশ্ব থেকে উদাহরণ নেবারও প্রস্তাব দেন, যেমন পাটাগোনিয়া - যে কোম্পানীটি বহু বছর ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক ব্যবসা হিসেবে কাজ করার পর নিজেকে সামাজিক ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করেছে। কোম্পানীটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজের মালিকানা হস্তান্তর করেছে।

 
প্রফেসর ইউনূস আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেলের নিকট সামাজিক ব্যবসা “ইউনূস ইনভায়ার্ণমেন্টাল হাব”-এর কর্মকান্ড তুলে ধরেন যা পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিয়োজিত। তিনি আরো জানান যে, ইউনূস ইনভায়ার্ণমেন্টাল হাব ইউএন-হাবিট্যাট, জাতি সংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও এই ক্ষেত্রে কাজ করছে এমন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে কাজ করবে।

 
প্রফেসর ইউনূস ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক এর ক্রমাবনতিশীল অবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। আমাজনের পরেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট এই এলাকাটির বনাঞ্চল এই মূহুর্তে সর্বোচ্চ গতিতে ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশের ড্রাগ-লর্ডদের মতো এখানে চারকোল-লর্ডরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এখন শীর্ষস্থানীয় তেল কোম্পানীগুলি এখানকার জীবাশ্ম-জ্বালানী আহরণ করতে পাইপলাইন স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে কাজ করা ভিরুঙ্গাকে রক্ষা করতে প্রফেসর ইউনূস ইউএন-হাবিট্যাট প্রধানের পথনির্দেশনা কামনা করেন।

 
তাঁরা উভয়েই টেকসই উপায়ে শূন্য-অপচয় লক্ষ্য অর্জনে ভবিষ্যতে আরো সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত হন।

 
ছবির ক্যাপশন: জাতি সংঘের আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল ও ইউএন-হাবিট্যাট -এর নির্বাহী পরিচালক মিস মাইমুনাহ মোহামেদ শরিফ ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ইউনূস জাতি সংঘের “জিরো ওয়েস্ট প্রোগ্রাম” নিয়ে গত ১০ মে ২০২৩ কেনিয়ার রাজধানী ও নাইরোবীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে করমর্দন করছেন। ছবিঃ ইউনূস সেন্টার /লামিয়া মোরশেদ

Related Contents