ভারতের নেতৃস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করার ঘোষণা : স

ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (১৮ নভেম্বর ২০১৬ ):

 

নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করার কাজে নিয়োজিত বিশ্ব ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ভারতীয় সংগঠন “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ভারত” ও ভারতের বিখ্যাত “টাটা ট্রাস্ট্স”-এর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত “ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক” ১৮ নভেম্বর ২০১৬ মুম্বাইয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন ও গৃহায়নের মতো মৌলিক সামাজিক চাহিদাগুলো পূরণ এবং দরিদ্রদের সেবায় সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে ভারতীয় কর্পোরেশনগুলো নিজেদের মতো করে এই উদ্যোগ নিলো। বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক তাদের মৌলিক ব্যবসায়িক দক্ষতা ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ কর্পোরেট সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে টেকসই উপায়ে সমাজের বড় বড় সমস্যাগুলো মোকাবেলায় ভারতের প্রথম প্লাটফর্ম হিসেবে এই ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলো। নব প্রতিষ্ঠিত এই কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও ভৌগোলিক উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবে। যে সকল কোম্পানী ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংকে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছে তারা হচ্ছেঃ টাটা ট্রাস্ট, টাটা স্টীল, আরপিজি গ্রুপ, ড্যানোন ইন্ডিয়া এবং ভিওলিয়া ইন্ডিয়া। আরো দশটি কোম্পানী ইতোমধ্যে এতে যোগদান করার অপেক্ষায় আছে এবং এই যৌথ উদ্যোগে যোগদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবার প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।

এই পার্টনারশীপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় আইডিয়া এবং এর ফলে ব্যবসা জগতে একটি সম্পূর্ণ নতুন ইকো-সিস্টেমের জন্ম হবে। ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক ব্যবসা মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সমান্তরালভাবে সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করতে পারে - এই উদ্যোগ সেই বার্তাটিই দিচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কর্পোরেশনগুলি ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে শুধুমাত্র আলোচনা করার উদ্দেশ্যেই একত্রিত হয়নি, বরং সামাজিক ব্যবসা পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার প্রকৃত সমাধানের জন্য সক্রিয় হতে যাচ্ছে এটাই নতুন সংবাদ। এটি শুধুমাত্র ভারতের জন্যই নয়, বরং গোটা পৃথিবীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। আমি ভারতীয় অ্যাকশন ট্যাংকের সর্বোত সাফল্য কামনা করি।”

টাটা ট্রাস্ট্স এর হেড অব ইনোভেশন গনেশ নীলম বলেন, “টাটা ট্রাস্ট্স-এ আমরা বিশ্বাস করি যে, কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্ট, উদ্ভাবনশীল ও প্রতিরূপ-নির্মাণযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যেই রয়েছে ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়ন। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কর্পোরেটগুলোর বর্ধ্বিত মনোযোগের মধ্য দিয়ে ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটিগুলোর জীবনমান উন্নয়নে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা তৈরীর কাজ করে যাবে।”

টাটা ট্রাস্ট্স এর লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংকে অংশগ্রহণকারী কর্পোরেশনগুলোকে নেতৃত্ব দেয়া। টাটা ট্রাস্ট্স সমাজের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো অনুধাবন করতে এই সামাজিক ব্যাবসাগুলোকে সহায়তা করবে এবং কমিউনিটির সাথে টাটার শক্তিশালী যোগাযোগকে কমিউনিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ট সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে নবগঠিত সামাজিক ব্যবসাগুলোর পাইলটিং ও ক্রমপ্রসারের কাজে সহায়তা করবে।

মহারাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জনাব সুধির মানগান্তিওয়ার, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জনাব দীপক ভাসান্ত কেশরকার এবং ভারতের নেতৃস্থানীয় কর্পোরেশনগুলোর প্রধান নির্বাহী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভারতীয় সামাজিক ব্যবসা ফোরাম চলাকালে ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংকের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ফোরামের প্রধান অতিথি প্রফেসর ইউনূস অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ২০০ অংশগ্রহণকারী ফোরামে যোগ দেন। অন্যান্য যে সকল কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এতে যোগ দেয় তাদের মধ্যে ছিল সডেক্সো ইন্ডিয়া, মাহিন্দ্র, ইউটিভি গ্রুপ, আরপিজি এন্টারপ্রাইজেস, অ্যাপোলো, ওকহাড্র্ট এবং টাটার কয়েকটি কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ।

মন্ত্রীদ্বয় ও প্রফেসর ইউনূস বিনীতা রেড্ডির পারিবারিক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ব্যাংগালুরুতে একটি “সামাজিক ব্যবসা ফান্ডের” প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। মিস রেড্ডি ভারতের নেতৃস্থানীয় ক্ষদ্রঋণ ব্যাংক “গ্রামীণ কুটা”রও প্রতিষ্ঠাতা। “ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ফান্ড ব্যাংগালুরু” নামে নবপ্রতিষ্ঠিত এই ফান্ডের প্রাথমিক মূলধন ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তহবিলটি কর্ণাটক ও আশেপাশের রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম সামাজিক ব্যবসা তহবিলটি ২০০৯ সালে জনাব শেলগিকার কর্তৃক মুম্বাইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত তহবিলের এক লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তহবিলটি মুম্বাইয়ে অনেকগুলো সফল সামাজিক ব্যবসার জন্ম দিয়েছে।

প্রফেসর ইউনূস বার্ষিক ফিলানথ্রপি ফোরামের প্রধান বক্তা হিসেবেও বক্তৃতা করেন। এই ফোরামের আয়োজক উইপ্রোর সভাপতি জনাব আজিম প্রেমজি, জনাব জামশেদ গোদরেজ ও বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব জনাব বিল গেট্স।

প্রফেসর ইউনূস মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারমরমিং আর্টসে অনুষ্ঠিত ভারতের নেতৃস্থানীয় সাহিত্য উৎসব “টাটা লিট লাইভ”-এ যোগদান করেন। “ব্যাংকিং ফর দি বটম বিলিয়ন” শীর্ষক একটি বিশেষ প্যানেলে ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সাথে তিনি মুখোমুখি আলোচনায় অংশ নেন।

প্রফেসর ইউনূস ভারতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীগেুলোর প্রধান নির্বাহীদের সাথে একটি একটি প্রাতঃরাশ সভায়ও যোগ দেন এবং সম্পদ কেন্দ্রীকরণের বিপদ ও তরুণদের ক্ষেত্রে চাকরী খোঁজার চেয়ে বরং উদ্যোক্তা হবার পথে তাদের পরিচালিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।

দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর প্রফেসর ইউনূস টাটা গ্রুপের আয়োজনে টাটার ১০টি কোম্পানীর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। তিনি নি¤œ আয়, স্বাস্থ্যসেবার অভাব, বার্ধক্য, বেকারত্ব এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলো থেকে অর্থনীতি ও সমাজকে রক্ষা করতে প্রথাগত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার উপর বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যের পর অংশগ্রহণকারীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

টাটা ট্রাস্ট্স

টাটা ট্রাস্ট্স ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি যা সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে কাজ করে থাকে। জন্মলগ্ন থেকে টাটা ট্রাস্ট্স যে-সকল কমিউনিটিতে কাজ করে আসছে সেখানকার মানুষদের জীবনে টেকসই ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে তা জনসেবার প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আনতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। সরাসরি কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সহ-পার্টনারশীপ কর্মকৌশল ও অনুদানের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, পল্লী জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিল্পকলা, কারুশিল্প, সংস্কৃতি এবং সিভিল সোসাইটি, সরকার ও মিডিয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে টাটা ট্রাস্ট্স সহায়তা দিয়ে আসছে এবং এসকল ক্ষেত্রে উদ্ভাবনশীলতাকে উৎসাহিত করছে। টাটা ট্রাস্ট্স তার প্রতিষ্ঠাতা জামশেদ টাটার নীতি-আদর্শ ও তাঁর পূর্বতৎপর জনসেবার (চৎড়ধপঃরাব চযরষধহঃযৎড়ঢ়ু) নীতি অনুসরণ করে দেশের উন্নয়ন চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন উদোগ ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজের উন্নতিতে ভূমিকা রেখে আসছে। এ বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য টাটার ওয়েব সাইট http://www.tatatrusts.org/ দেখুন।

ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ভারত

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সামাজিক ব্যবসা ভারত জার্মানীতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব ইউনূস সামাজিক ব্যবসার একটি অংশ। বিশ্ব ইউনূস সামাজিক ব্যবসা নোবেল লরিয়ট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক ভেঞ্চার ফান্ড যা পৃথিবীর ৭টি এলাকায় - কলম্বিয়া, ব্রাজিল, হাইতি, বলকান রাষ্ট্রসমূহ, তিউনিসিয়া, উগান্ডা ও ভারতে কাজ করছে।

 



ছবির ক্যপশন-১: টাটার বিভিন্ন কোম্পানীর প্রধান নির্বাহীদের সাথে একটি বিশেষ বৈঠক শেষে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রফেসর ইউনূসের সাথে এই বিশেষ সভায় পানি, শক্তি, স্টীল ও অন্যান্য খাতে কর্মরত টাটার কোম্পানীগুলো কীভাবে সামাজিক ব্যবসায়ে জড়িত হতে পারে তা আলোচনার জন্য এই সভার আয়োজন করা হয়।

 

ছবির ক্যপশন-২: ১৮ নভেম্বর মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে অনুষ্ঠিত ভারতীয় সামাজিক ব্যবসা ফোরামে মহারাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জনাব সুধির মানগান্তিওয়ার ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জনাব দীপক ভাসান্ত কেশরকারের সাথে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

 

ছবির ক্যপশন-৩: নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও মহারাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জনাব সুধির মানগান্তিওয়ার ভারতীয় কর্পোরেট অ্যাকশন ট্যাংক উদ্বোধন করেন। সামাজিক সমস্যাগুলো মোকাবেলায় নেতৃস্থানীয় ভারতীয় কোম্পানীগুলো কর্তৃক একক ও যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই অ্যাকশন ট্যাংক একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

Source Link:

Source: Yunus Centre

Updated Date: 8th March, 2017

Related Publications