হেগ-এ ১৬ বছর বয়সী পরিবেশ কর্মীর হাতে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার তুলে দিলেন ড. ইউনূস

ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ(২ ডিসেম্বর ২০১৬ ):

 

হেগ-এ অবস্থিত প্রসিদ্ধ “হল অব নাইট্সে” (Hall of Knights) ২ ডিসেম্বর ১৬ বছর বয়সী পরিবেশ কর্মী কেহ্কাশান বসুর হাতে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার তুলে দিলেন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শিশুদের অধিকার উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতি বছর কোন শিশুকে এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ীদের একটি একটি শীর্ষ সম্মেলনে “কিড্স-রাইটস” (Kids Rights) কর্তৃক এই পুরষ্কার চালু করা হয়।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তাঁর মূল বক্তব্যে কেহ্কাশানের কাজের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩০ লক্ষেরও বেশী ৫ বছরের কম বয়সী শিশু পরিবেশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণ করছে এবং আরো বেশী সংখ্যক শিশু পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন কারণে গভীরভাবে ভুগছে। তিনি বলেন, “একজন শিশুর জন্য এটা একটা বিশাল অর্জন যে, সে তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে এরই মধ্যে এতো বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। শিশুদের অস্তিত্ব, কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অপরিহার্য, আর এ-কারণে এটা শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে একটি পূর্বশর্তও বটে। কেহ্কাশান আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে যে, একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাওয়া আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।”

বাঙালী পিতা-মাতার সন্তান কেহ্কাশানের জন্ম সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মাত্র ৮ বছর বয়সে সে পরিবশে রক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে প্রতিবেশীদের শিক্ষাদান শুরু করে। এ সময় সে তার প্রথম বৃক্ষটি রোপণ করে এবং আরো শিশুদের নিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পরিত্যক্ত জিনিষ সংগ্রহ করতে শুরু করে। বারো বছরে বয়সে সে তার সংগঠন “গ্রীণ হোপ” প্রতিষ্ঠা করে যার মাধ্যমে সে অসংখ্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। এরপর সে জাতি সংঘ পরিবেশ কর্মসূচির “মেজর গ্রুপ ফর চিলড্রেন এন্ড ইয়ুথ”-এর এ-যাবৎকালের সর্বকনিষ্ঠ গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটরে পরিণত হয়। দশটিরও বেশী দেশে এক হাজারেরও বেশী তরুণ স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে গ্রীণ হোপ এখন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

এই সফরের শুরুতে প্রফেসর ইঊনূস ডিসেম্বর ১, ২০১৬ লন্ডনে অুনষ্ঠিত ট্রাস্ট উইমেন কনফারেন্সে মূল বক্তৃতা প্রদান করেন। তাঁর বক্তৃতায় তিনি “তিন শূন্য” - অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে উদ্যোক্তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

ট্রাস্ট উইমেন কনফারেন্সের আয়োজক টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন যা বিশ্বব্যাপী দাসত্ব মোকাবেলা ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রকৃত সমাধান বের করতে নিবেদিত। এই বার্ষিক সম্মেলনে নারী অধিকার রক্ষা ও দাসত্ব মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে কাজ করে যাওয়া সরকারী প্রতিনিধি, কর্পোরেশন, আইনজীবি ও অগ্রপথিকগণ মিলিত হন।

প্রফেসর ইউনূস একই দিনে লন্ডনের রিজেন্টস পার্কে অবস্থিত লন্ডন বিজনেস স্কুলে “সোশ্যাল বিজনেস - দি বিজনেস মডেল ফর দ্য ফিউচার” শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম বিজনেস স্কুল বলে বিবেচিত লন্ডন বিজনেস স্কুলের এই অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র, প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে প্রফেসর ইউনূসের বক্তৃতা শোনেন।

নেদারল্যান্ডসে প্রফেসর ইউনূস হেগ-এর লিডেন ইউনিভার্সিটি কলেজে ২৫০ জন ছাত্র ও শিক্ষকের উদ্দেশ্যে “দি পাওয়ার অব সোশ্যাল বিজনেস - এ ফিউচার ফর অল” শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন। লিডেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ যা বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। লন্ডন বিজনেস স্কুল, যুক্তরাজ্য ও লিডেন ইউনিভার্সিটি কলেজ, হেগ উভয়েই স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের আদর্শে সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে।

 



ছবির ক্যাপশন: নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পরিবেশ রক্ষায় তার অসাধারণ কাজের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১৬ বছর বয়সী পরিবেশ কর্মী কেহ্কাশান বসুর হাতে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার ২০১৬ তুলে দিচ্ছেন। হেগ-এর নাইট্স হলে (Hall of Knights) ২ ডিসেম্বর ২০১৬ প্রফেসর ইউনূস যে পুরষ্কার প্রদান করলেন তা বিশ্ব জুড়ে অন্য শিশুদের অধিকার রক্ষায় কোন শিশুর অসাধারণ কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে চালু হয়। Photo: ©KidsRights, Photographer: Rick Nederstigt

Source Link:

Source: Yunus Centre

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications