111 কোলকাতায় প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভাষণ দিলেন প্রফেসর ই

ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ(১০ জানুয়ারী ২০১৭ ):

১০ জানুয়ারী ২০১৭ কোলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশততম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত “গ্লোবাল এডুকেশন সামিট”-এ ভাষণ দিয়েছেন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ঐ দিনই বাংলার গভর্ণর তাঁকে “রাজভবন”-এ স্বাগত জানান ও তাঁর সাথে নৈশ ভোজে যোগ দেন। প্রফেসর ইউসূসের সঙ্গে ছিলেন প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুরাধা লোহিয়া।

দুইশত বছর আগে ১৮১৭ সালে কয়েকজন শিক্ষা কর্মীর উদ্যোগে “হিন্দু কলেজ” নামে জন্ম নেয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে “প্রেসিডেন্সী কলেজ” নামে সমধিক খ্যাতি অর্জন করে। হিন্দু কলেজ বৃটিশ ভারতে পশ্চিমা উচ্চ শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়।

প্রফেসর ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকীর্ণ দিরোজিও অডিটোরিয়ামে ভাষণ দেন।

 



বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশততম বার্ষিকীর অংশ হিসেবে আয়োজিত “রিডিজাইনিং ইকোনমিক্স টু রিডিজাইন দ্য ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক গণ বক্তৃতা প্রদানের জন্য প্রফেসর ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কোলকাতার সকল গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় সংবাদটি প্রচারিত হয়।

প্রফেসর ইউনূসের বক্তৃতার উপজীব্য ছিল তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়ে তাঁর অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে তিনি উপলদ্ধি করেন যে, অর্থনীতির প্রচলিত তত্ত্বগুলো মানুষের বাস্তব জীবনে কোন কাজে আসে না। উদাহরণ স্বরূপ, মহাজনরা গরীব গ্রামবাসীদের জীবন ধ্বংস করে দিলেও প্রথাগত ব্যাংকিং এই মানুষগুলোর কোন উপকারেই আসেনি। ফলে গরীব মানুষদেরকে ঋণ সুবিধা দেবার জন্য তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা গড়ে তোলেন ও তা বাস্তবে রূপায়িত করেন।

তিনি শ্রোতাদের বলেন যে, যখনই তিনি কোন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন, তখনই তিনি একটি সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করেছেন। এজন্য প্রয়োজন হয়েছে প্রথাগত ব্যবসাকে - যার মূল লক্ষ্য মুনাফা সর্বোচ্চকরণ - পুনর্গঠিত করার। অপর দিকে সামাজিক ব্যবসা তৈরীই হয় কোন সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে এবং বিনিয়োগকারী এখান থেকে কোন লভ্যাংশ পান না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সম্পদ ক্রমাগতভাবে অল্প কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হওয়ায় পৃথিবীতে একটি বড় ধরনের সংকট তৈরী হচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখান, এই প্রবণতা বিশ্ব অর্থনীতিকে শীঘ্রই বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। এর একটি সমাধান হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ভেতরে জন্মগতভাবে বিদ্যমান উদ্যোক্তার শক্তিকে বিকশিত হবার সুযোগ করে দেয়া এবং তাদেরকে চাকরি খোঁজার বদলে চাকরি তৈরীর হাতিয়ারে পরিণত করা। এই প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর তৈরী প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গ্রামীণ পরিবার থেকে হাজার হাজার নবীন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে তার বর্ণনা দেন। নবীন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে পুঁজি সরবরাহ করতে সামাজিক ব্যবসা তহবিল সৃষ্টির মাধ্যমে এটা করা হচ্ছে। একইভাবে পৃথিবীর আরো অনেক দেশে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, লোভ দ্বারা চালিত ব্যবসার স্থলে সামাজিক লক্ষ্য চালিত ব্যবসা ধীরে ধীরে একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে যাচ্ছে। পৃথিবী শীঘ্রই পরিণত হবে তিন শূন্য’র - অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণের একটি নতুন পৃথিবীতে।

প্রফেসর ইউনূস এরপর শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুরাধা লোহিয়া প্রশ্নোত্তর পর্বটি পরিচালনা ও এতে সভাপতিত্ব করেন।

Source Link:

Source: Yunus Centre

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications