ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (৮ এপ্রিল ২০১৭)
মেলবোর্ণ, ৭ এপ্রিল ২০১৭
নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মেলবোর্ণে অনুষ্ঠিত প্রথম অষ্ট্রেলেশিয় সামাজিক ব্যবসা ফোরামে যোগদান করেছেন। এছাড়াও তিনি সিডনি, ক্যানবেরা ও মেলবোর্ণে বিভিন্ন মন্ত্রী, শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাএবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মিডিয়ার সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন। এসকল বৈঠকে সামাজিক ব্যবসা কীভাবে অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে এবং এই এলাকায় ও অন্যত্রঅষ্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক উন্নয়ন কর্মকৌশলের অংশীদার হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৃহস্পতিবার প্রফেসর ইউনূস মেলবোর্ণে অনুষ্ঠিত অষ্ট্রেলেশিয় সামাজিক ব্যবসা ফোরাম উদ্বোধন করেন। গ্রামীণ অষ্ট্রেলিয়া ও প্রাইভেট ওয়েল্থ নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই ফোরামে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সরকারী কর্মকর্তা ও সিভিলসোসাইটির প্রতিনিধিসহ ৩৮০ জন অংশগ্রহণকারী যোগদান করেন। এই সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে “পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান।” সম্মেলনে অষ্টেলিয়ায় কাজ করছে এমন সামাজিক ব্যবসাগুলোর মধ্যেঅভিজ্ঞতা বিনিময় ছাড়াও এবং অষ্ট্রেলিয় সমাজের বিভিন্ন সমস্যা আরো কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সামাজিক ব্যবসাকে কীভাবে আরো সম্প্রসারিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য ছিল প্রধানত যুব সমাজের উদ্দেশ্যে যেখানে তিনি তরুণদের চাকরি-কেন্দ্রিক চিন্তা পরিহার করে বরং উদ্যোক্তা হতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যে, কেবল সৃষ্টিশীলতাই মানুষকে সামনে এগিয়েনিয়ে যায় এবং একমাত্র উদ্যোক্তা হিসেবেই একজন মানুষ নিজের সৃষ্টিশীলতাকে বিকশিত করে নিজের ও সমাজের অন্যদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি বলেন যে, যন্ত্র এবং রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির এই যুগে মানুষের সৃষ্টিশীলতা বিকাশের প্রয়োজন আরো বেশী করে অনুভূত হচ্ছে।
ফোরাম চলাকালীন প্রফেসর ইউনূস তরুণ সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তাদের সাথে বৈঠক করেন এবং সম্মেলনের মার্কেটপ্লেসে তাঁর সামাজিক ব্যবসা নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে অষ্টেলিয়ায় চালু ২০টি সামাজিক ব্যবসার উদ্যোক্তাদের প্রদর্শণীপরিদর্শন করেন ও তাদের সাথে কথা বলেন।
সিডনীতে তাঁর সফরের শুরুতে প্রফেসর ইউনূস অষ্টেলিয়ার অর্থমন্ত্রী স্কট মরিসন, এমপি-র সাথে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে যুব বেকারত্ব, আদিবাসী কমিউনিটিগুলোর বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং সাধারণভাবে অষ্ট্রেলিয়ারবিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় সামাজিক ব্যবসা কীভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রফেসর ইউনূসের বৈশ্বিক কর্মকান্ড সম্পর্কে ইতোমধ্যে পরিচিত অর্থমন্ত্রী মরিসন অষ্টেলিয় সরকারের সামাজিকঅন্তর্ভূক্তি কর্মসূচিগুলোকে কীভাবে আরো টেকসই, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসের পরামর্শ চান। তাঁরা সম্ভাব্য কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন প্রফেসর ইউনূসের সহযোগিতা নিয়েযেগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রফেসর ইউনূসকে এছাড়াও ক্যানবেরায় অবস্থিত অষ্ট্রেলিয় সরকারের বৈদেশিক কার্যক্রম ও বাণিজ্য বিভাগে আমন্ত্রণ জানানো হয় যেখানে তিনি এই বিভাগেরই কুটনৈতিক একাডেমীর অংশ হিসেবে নব-প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিকউন্নয়ন ফ্যাকাল্টির উদ্বোধন করেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স-এর ড. ডানকান গ্রীন এবং কেয়ার-এর প্রধান নির্বাহী স্যালি ময়লের সাথে একটি প্যানেলের অংশ হিসেবে বিশেষ করে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় পরিচালিতঅষ্ট্রেলিয় সরকারের সহায়তা কর্মসূচিগুলোয় সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে কাজ করতে তরুণ কুটনীতিকদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর তিনি এই বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সামাজিক ব্যবসাকীভাবে অষ্ট্রেলিয় সরকারের বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচিগুলোর একটি অংশ হতে পারে তার উপায় খুঁজে বের করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন।
মেলবোর্ণে প্রফেসর ইউনূস পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় জুলি বিশপ, এমপি-র সাথে সাক্ষাৎ করেন যিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বিশেষত পাপুয়া নিউ গিনি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জে পরিচালিত বৈদেশিক উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে সামাজিকব্যবসার পদ্ধতি চালু করতে আগ্রহী। উল্লেখ্য যে, এই দু’টি এলাকা জাতি সংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশপ ও প্রফেসর ইউনূস এই দু’টি দেশ সহ অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যেসামাজিক ব্যবসা তহবিল সৃষ্টির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেন যাতে এসব এলাকায় ক্রমাগতভাবে উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদান করা যায় এবং এই সহযোগিতার অধীনে প্রদত্ত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস সিডনিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েল্স এবং মেলবোর্ণে অবস্থিত লা ট্রোবে ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন এবং এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। উল্লেখ্যযে, এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েই ইউনূস সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি লা ট্রোবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত “Doctor of Letters Honoris Causa” গ্রহণ করেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে কাজ শুরু করাইউনূস সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন।
প্রফেসর ইউনূস সেখানে অবস্থানকালে উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন মিডিয়া অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। এর মধ্যে একটি ছিল টনি জোনসের সঞ্চালনায় এবিসি নেটওয়ার্কের জনপ্রিয়তম টেলিভিশন টক শো “Q and A” যেখানে আরো অংশনেন পরিবেশ মন্ত্রী জশ ফ্রাইডেনবার্গ, ডেনমার্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেলে থরনিং স্মিড্ট এবং বিশিষ্ট সংবাদপত্র ‘দ্য অষ্ট্রেলিয়া’র সম্পাদক পল কেলি।
এই তিনটি শহর সফরকালে প্রফেসর ইউনূস বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম, বিভিন্ন বিশিষ্ট ও জনহিতকর কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের নিকট থেকে আমন্ত্রণ পান যাঁরা অষ্টেলিয়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্যগৃহীত তাঁদের কর্মকান্ডকে আরো কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে আগ্রহী।
রেডিও মেলবোর্ণের লাইভ রেডিও শো “Conversation Hour with Jon Faine” প্রফেসর ইউনূসের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
প্রফেসর ইউনূস আরো কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিউজিল্যান্ড ও কুইন্সল্যান্ডে যাচ্ছেন।
ছবির ক্যাপশন-১: অষ্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে মেলবোর্ণে অবস্থিত কমনওয়েল্থ পার্লামেন্টারী অফিসে অভ্যর্থনা জানান। তাঁদের বৈঠকে সামাজিক ব্যবসা কীভাবে এই এলাকায়ও অন্যত্র অষ্ট্রেলিয়ার উন্নয়ন সহযোগিতা কৌশলের অংশ হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ছবির ক্যাপশন-২: নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও অষ্ট্রেলিয়ার মাননীয় ট্রেজারার (অর্থ মন্ত্রী) স্কট মরিসন। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কীভাবে অষ্ট্রেলিয়ার বিশেষ করে এর আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর সামাজিকঅন্তর্ভূক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে মাননীয় মরিসন প্রফেসর ইউনূসকে একটি বিশেষ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান।