ক্ষুধা নির্মূলে “জি ২০”-এর উদ্যোগ : প্রফেসর ইউনূসকে সঙ্গে নিয়ে জার্মান মন্ত্রীর “বার্লিন চার্টার” উদ্বোধন
প্রেস রিলিজ
নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে সঙ্গে নিয়ে জার্মান কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী ড. গার্ড ম্যুলার “বার্লিন চার্টার” উদ্বোধন করলেন। “One World No Hunger : Future of the Rural World” এর ভিত্তিতে রচিত এই চার্টার এপ্রিল ২৮-২৯, ২০১৭ বার্লিনে অনুষ্ঠিত এ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী পর্বে উদ্বোধন করা হয়। বার্লিন চার্টারের খসড়া প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে আয়োজিত অনেকগুলো ধারাবাহিক সভার শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে চূড়ান্তকৃত এই চার্টার একটি জি ২০ কর্মকৌশল হিসেবে আগামী জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। জার্মান মন্ত্রীর সাথে সাংবাদিক সম্মেলনে যোগদানকারী প্রফেসর ইউনূস উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে চার্টারটি এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে এই চার্টার বাস্তবায়নে তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। প্রফেসর ইউনূস বার্লিন চার্টারের খসড়া তৈরীর উদ্দেশ্যে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। এই চার্টারে যে সকল বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র নির্মূল এবং তরুণ উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান, নারীর অংশহগ্রহণ ও কৃষি উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে তরুণ সমাজ, সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ এবং প্রযুক্তির ভূমিকা। এই চার্টার জি ২০-র জার্মান প্রেসিডেন্সীর একটি অংশ যা আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে তরুণদের ভবিষ্যতের উপর জোর দিচ্ছে।
প্রফেসর ইউনূস ২৭ এপ্রিল ২০১৭ “Jobs, jobs, jobs – but who does what?” শীর্ষক এই সম্মেলনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে অংশ নেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, এ সমস্যার প্রকৃত সমাধানটি চাকরীর মধ্যে নয়, বরং তরুণদের উদ্যোক্তা হবার মধ্যে নিহিত। তিনি তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব শূন্যে নামিয়ে আনায় তাঁর চিন্তা ও অভিজ্ঞতা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গঠনে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন যেখানে তরুণদেরকে ঋণের ভারের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা না করে বরং ফান্ডকে তার ব্যবসার অংশীদার হবার সুযোগ দিচ্ছে। তিনি আফ্রিকান কৃষির বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে মানবীয় সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে লভ্যাংশবিহীন সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তিনি আফ্রিকায় পরিচালিত জি ২০ দেশসমূহের কোম্পানীগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেন তারা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আফ্রিকায় ও আফ্রিকা থেকে মুনাফা করার পাশাপাশি আফ্রিকান জনগণের জীবনমান উন্নয়নে অংশ নেয়।
বার্লিন চার্টারে বিশ্বব্যাপী সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটিদের ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ৬০ কোটি মানুষকে ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে একযোগে কৃষি, পুষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত উপযুক্ত কর্মপন্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও চার্টারে অনুপুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত কারণে পৃথিবীর প্রায় ২০০ কোটি মানুষের অদৃশ্য ক্ষুধার প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণের উপর জোর দেয়া হয়।
বার্লিনে অবস্থানকালে প্রফেসর ইউনূস আরো অনেকগুলো বৈঠক ও সম্মেলনে যোগ দেন। এদের একটি ছিল তরুণ ধনী উদ্যোক্তাদের একটি সভায় যোগদান যেখানে তিনি যাঁদের সামাজিক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে ও সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটেল ফান্ড গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি তাঁরই তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে গঠিত সামাজিক ব্যবসা “ইমপ্যাক্ট হাব”-এর তরুণ উদ্যোক্তাদের সাথেও বৈঠক করেন। ২০০৯ সালে ভিয়েনায় প্রতিষ্ঠিত ইমপ্যাক্ট হাব বর্তমানে পৃথিবীর ৯৫টি নগরীতে কাজ করছে। এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস ভিয়েতনামে একটি যৌথ সামাজিক ব্যবসা প্রকল্প চূড়ান্ত করতে জার্মানীতে World Wildlife Fund (WWF)-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক করেন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য প্লাষ্টিক বর্জ্যে দূষিত মেকং নদীর পানি পরিশোধন।
ছবির ক্যাপশন: নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক জার্মানীর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. গার্ড ম্যুলার “বার্লিন চার্টার” উদ্বোধন করছেন। “One World No Hunger : Future of the Rural World” এর ভিত্তিতে রচিত এই চার্টার এপ্রিল ২৮-২৯, ২০১৭ বার্লিনে এ বিষয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনের সমাপনী পর্বে উদ্বোধন করা হয়। চার্টারটি একটি জি ২০ কর্মকৌশল হিসেবে আগামী জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।
-------