জেনেভায় এগফান্ডের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভায় সভাপতিত্ব করলেন প্রফেসর ইউনূস
প্রেস রিলিজ
দরিদ্রদের জন্য পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার ১৪টি দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ১৪টি নতুন ব্যাংক
গত ১৯ এপ্রিল ২০১৭ জেনেভাস্থ জাতি সংঘ দপ্তরে এগফান্ড (আরব গাল্ফ ফান্ড)-এর উপদেষ্টা পরিষদের তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় অংশ নেন ক্ষুদ্রঋণের উপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞগণ, দরিদ্রদের জন্য আরব গাল্ফ ফান্ড ব্যাংকসমূহের প্রধান নির্বাহীবৃন্দ, ব্যবসায়ীগণ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। উপদেষ্টা পরিষদ উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত কৌশলগত পরিকল্পনা বিষয়ে এগফান্ডকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ বছর অনুষ্ঠিত তৃতীয় বার্ষিক সভায় এ যাবত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অর্জন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। স্পেনের মহামান্য রাণী সোফিয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় আরো অংশ নেন ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলী এবং এগফান্ড পুরস্কার কমিটির বোর্ড সদস্যবৃন্দ।
সভায় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১৪টি দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে এই দেশগুলোতে এগফান্ডের অর্থায়নে দরিদ্রদের জন্য ১৪টি ব্যাংক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দেশগুলোর মধ্যে ৮টি দেশ পশ্চিম আফ্রিকা ও ৬টি দেশ মধ্য আফ্রিকাভূক্ত। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূসের উৎসাহ ও সমর্থনে এগফান্ডের অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ৯টি দেশে ইতোমধ্যে দরিদ্রদের জন্য ৯টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় হার প্রায় ৯৯ শতাংশ এবং ঋণগ্রহীতাদের বড় অংশই নারী। সামাজিক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকগুলো পুরোপুরিভাবে গ্রামীণের ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
এগফান্ড বিদ্যমান ও ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা করছে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের উৎসাহে মহামান্য প্রিন্স তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এগফান্ডকে ক্ষুদ্রঋণের সাথে যুক্ত করার উদ্যোগ নেন। উপদেষ্টা পরিষদ আগামী বছর থেকে এগফান্ড পুরস্কারের পরিমাণ বর্তমানে প্রদত্ত ৫ লক্ষ ডলার থেকে ১০ লক্ষ ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।
এগফান্ড তার মানবিক উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রকল্পের ১৮তম বার্ষিকী উদ্যাপন করলো। স্পেনের মহামান্য রাণী সোফিয়া ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এগফান্ডের পুরস্কার কমিটির সভায় যৌথ-সভাপতিত্ব করেন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানবিক সংকটের মুখোমুখি এই বিশ্বে মানব উন্নয়ন ও মানবিক ইস্যুগুলোতে এগফান্ডের নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা কাঠামোয় ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হচ্ছে। সভার পাশাপাশি প্রফেসর ইউনূস ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ড. বানদার হাজ্জারের সাথে একটি পৃথক বৈঠকও করেন।
এগফান্ড পুরস্কার তাদেরই দেয়া হয় যারা বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা সুনির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্রে একবারে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মানুষদের উন্নয়নে লক্ষণীয় কোন উদ্যোগ পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছে। সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, জাতি সংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছরের পুরস্কারের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হবে। ২০১৬ এগফান্ড পুরস্কার বিজয়ী ৩টি প্রকল্পের নাম ঘোষণা করা হয় যারা সম্মিলিতভাবে ৫ লক্ষ ডলার সমপরিমাণ অর্থ পুরস্কার হিসেবে পাবে। এছাড়া ২০১৬ সালের জন্যও এগফান্ড পুরস্কার জয়ীদের নামও ঘোষণা করা হয় যারা আগামী বছর পুরস্কার গ্রহণ করবে। অনুষ্ঠানে এই পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতায় সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পগুলোকেও একটি পৃথক ক্যাটেগরী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
ছবির ক্যাপশন-১: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ জেনেভায় অনুষ্ঠিত এগফান্ডের তৃতীয় উপদেষ্টা পরিষদ সভায় স্পেনের মহামান্য রাণী সোফিয়া ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
ছবির ক্যাপশন-২: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ জেনেভায় অনুষ্ঠিত এগফান্ডের তৃতীয় উপদেষ্টা পরিষদ সভায় নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. বানদার হাজ্জার।