পদ্মা সেতু, কর ফাঁকি ও বিদেশে বেআইনীভাবে অর্থ প্রেরণ প্রসঙ্গে ইউনূস সেন্টারের প্রতিবাদ
গত কয়েক দিন ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাঁর পুত্র প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, কয়েকজন মন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন সাংসদ সহ দেশের শীর্ষ আইন প্রণেতারা ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে, সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে এবং বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টির নেপথ্যে থাকার জন্য নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে কঠোরভাবে অভিযুক্ত করে কটু ভাষায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোন বিবৃতি দেননি। আমরা প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অপরপক্ষে প্রফেসর ইউনূস ২০১১ সাল থেকে বহুবার এই মর্মে বলে এসেছেন যে, তিনি বরাবরই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোন প্রশ্নই আসেনা। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ বিষয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করার পর গত ২৮ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে সহ বহুবার তিনি এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। আমরা আবারো তার পুনরাবৃত্তি করছি।
পদ্মা সেতু সংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়াও কয়েকটি পত্রিকা সুত্র উল্লেখ না করে এই মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রফেসর ইউনূসের উপর ৬৯ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। এই তথ্যটিও সত্য নয়। প্রফেসর ইউনূসের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোন অনাদায়ী অর্থের দাবী নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে এ মর্মে জানিয়েছি যে, প্রফেসর ইউনূস তাঁর সকল কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন। তাঁর আয় ও কর সংক্রান্ত সকল তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আছে। তিনি তাঁর আইনগত অধিকার বলে সাম্প্রতিক কিছু কর দাবী সম্পর্কে, যা তাঁর নিকট অন্যায্য মনে হয়েছে, আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে আদালতের যে-কোন সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।
আকস্মিকভাবে এবার আরেকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট কর্তৃক বিদেশে অর্থ প্রেরণ নিয়ে। গ্রামীণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় অন্যান্য দেশে ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি রেপ্লিকেশনে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ ও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ইউএসএআইডি ও নেদারল্যান্ডস সহ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা থেকে ডোনার ফান্ড বাবদ প্রাপ্ত ৪৭ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা সমপরিমাণ অর্থ ৩৮টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে সহায়তা বাবদ পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে যে, এই স্থানান্তরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সংক্রান্ত কোন তথ্য আয়কর ফাইলে নেই।
এতে এই ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, গ্রামীণ ট্রাস্ট বাংলাদেশকে দেয়া সহায়তার অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করছে। বিষয়টি তা নয়। ডোনাররা গ্রামীণ ট্রাস্টকে এই অর্থ শুধুমাত্র ঐ সকল দেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ঐ দেশগুলোর ঐ সকল প্রকল্পে অর্থ প্রেরণের সকল আইনগত অনুমোদন এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব লেনদেন সংক্রান্ত সকল দলিল গ্রামীণ ট্রাস্টে সংরক্ষিত আছে এবং বহিঃনিরীক্ষগণ বাৎসরিক ভিত্তিতে এগুলো নিরীক্ষণও করেছেন। গ্রামীণ ট্রাস্টের বাৎসরিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য সব সময় দেয়া হয়েছে এবং এসব প্রতিবেদন গ্রামীণ ট্রাস্টের ট্যাক্স রিটার্নসের সাথে নিয়মিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে।
----