গ্রামীণ টেলিকম: বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের আলোকবর্তিকা

21st November, 2023

গ্রামীণ টেলিকম: বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের আলোকবর্তিকা

প্রেস রিলিজ



ঢাকা, বাংলাদেশ, ২১ নভেম্বর ২০২৩

১৯৯৭ সালে মোবাইল টেলিফোন বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শুধু নয়, বিশ্বের যে কোন দেশে একটি উঁচুদরের বিলাস পণ্য ছিল। আর বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের জন্য—তো এটি ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যে—কোন ধরনের টেলিফোন সেবা ছিল বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত, শহরাঞ্চলেও এটি ছিল প্রায় সকলেরই নাগালের বাইরে। গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য তাঁর ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির সাফল্যের পর পরই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গ্রামীণ—এর ফোন নেটওয়ার্ক সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি টেলিফোনের সুবিধা প্রতিষ্ঠা করে পুরো দেশকে টেলিফোন সেবার আওতায় নিয়ে আসতে কর্মসূচি গ্রহণ করলেন।  তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র ঋণগ্রহীতা মহিলাদের মাধ্যমে - যাঁরা পরবর্তীতে“টেলিফোন লেডি” নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন - সর্বসাধারণের কাছে ফি’র বিনিময়ে এই ফোন সুবিধাটি পেঁৗছে দেবার জন্য উদ্যোগ নিলেন।

গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী শক্তি হিসেবে গ্রামের দরিদ্র মহিলাদেরকে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সামাজিক ব্যবসা (একটি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যবিহীন কোম্পানি) হিসাবে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীকে দেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

২৬ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে গ্রামীণ টেলিকম সাশ্রয়ী মূল্যের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির মাধ্যমে শহর ও গ্রামীণ বাংলাদেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান দূর করার লক্ষ্যে তার যুগান্তকারী কর্মসূচি “পল্লী ফোন কর্মসূচি” চালু করে। শুধুমাত্র গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য এই কর্মসূচিটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র মহিলা সদস্যদের উদ্যোক্তা—দক্ষতা ব্যবহার করে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি অনন্য হাতিয়ার হিসেবে এই  পল্লী ফোন চালু করা হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে মাত্র ২৪ জন গ্রাহক নিয়ে পল্লী ফোন কর্মসূচিটি চালু হয়েছিল এবং জুন ২০১৬ এর শেষ নাগাদ সারা দেশে এই কর্মসূচিটির গ্রাহকের সংখ্যা ১৭ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি এবং পরিষেবা দেশের সকল স্থানে ও সকল মানুষের কাছে পেঁৗছে গেছে।

গ্রামীণ টেলিকমের ইতিহাস
সকলের কাছে টেলিযোগাযোগ সহজলভ্য করার দূরদর্শী প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ জনগণ  বিশেষত গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নের উপর বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তার যাত্রা শুরু করে। এর ফ্ল্যাগশীপ উদ্যোগ “পল্লী ফোন কর্মসূচি” দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি প্রতীক হয়ে উঠে। গ্রামীণ ফোনের সহযোগিতায় পরিচালিত এই কর্মসূচিটি গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ গ্রামে গুরুত্বপূর্ণ টেলিযাগাযোগ সেবা প্রদানের সুযোগ করে দেয়।

পল্লী ফোন কর্মসূচি তার সৃজনশীলতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে:


১. CAPAM Bronze Award for Service to the Public (1998): জনসেবার জন্য পল্লীপোন কর্মসূচির অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গ্রামীণ টেলিকম ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট দ্বারা CAPAM Bronze অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়।

২. GSM Community Service (1998): ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ টেলিকমকে GSM Association কর্তৃক GSM Community Service    পুরস্কার প্রদান করা হয়। GSM Association লন্ডনভিত্তিক বিশ্ব ব্যাপী ৭৫০টি মোবাইল অপারেটরদের একটি সংগঠন। এই স্বীকৃতি গ্রামীণ টেলিকমকে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে তার অসামান্য প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়।

৩. Petersburg Prize for Use of the IT to improve Poor People’s Lives (2004): সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনমান উন্নত করতে তথ্য প্রযুক্তির সূদুরপ্রসারী ও প্রভাবশালী ব্যবহারের জন্য গ্রামীণ টেলিকম ২০০৪ সালে মর্যাদাপূর্ণ এই পিটার্সবার্গ পুরস্কার অর্জন করে।

৪. First ITU World Information Society Award (2005): একটি তথ্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে তার দূরদর্শী উদ্যোগের স্বীকৃতি স্বরূপ গ্রামীণ টেলিকমকে ২০০৫ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) কর্তৃক প্রথম আইটিইউ ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন সোসাইটি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের “টেলিফোন লেডি কর্মসূচি”

 

  • বাংলাদেশের টেলিফোন লেডি কর্মসূচির যুগান্তকারী সাফল্য গ্রামীণ টেলিকমের একটি যুগান্তকারী  উদ্যোগ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই কর্মসূচির তাৎপর্যের প্রমাণ হিসেবে কর্মসূচিটি  স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে একটি বিশেষ সম্মানের স্থান পেয়েছে যেখানে এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই স্বীকৃতি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে টেলিযোগাযোগ সুবিধা ব্যবহারে কর্মসূচিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে।
  • স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরে অবস্থিত স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর ২০১৬ সালে দশটি নতুন গ্যালারি খুলে। এদের মধ্যে একটি গ্যালারি বাংলাদেশের “টেলিফোন লেডি”—র উপর। প্রদর্শনীটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্যালারির অধীনে ০৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়।
  •  স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়াম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণ টেলিকমের সাথে যোগাযোগ করে। গ্রামীণ টেলিকম পল্লী ফোন কর্মসূচি সংক্রান্ত কেস স্টাডি, নিউজলেটার, গাইড বই এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠায় যা ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন টেলিফোন লেডি তাঁর ফোন ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। প্রদর্শণীর মধ্যে ছিল নোকিয়া হ্যান্ডসেট, জিএসএম টেস্টার এবং একটি সাইনবোর্ড স্ট্যান্ড।


আগামী দিনের পরিকল্পনা
গ্রামীণ টেলিকম তার অগ্রতির সাথে সাথে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষমতায়ন এবং অন্তভূর্তিমূলক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে তার মূল প্রতিশ্রম্নতি থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি আরও সহযোগিতামূলক, উদ্ভাবনশীল ও ইতবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি আরো সুসংবদ্ধ ও সমৃদ্ধ গ্রামীণ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

Related Contents