প্রফেসর ইউনূস তাঁর ১০ দিনের ইউরোপ সফর শেষ করলেন
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ ( ১২ জুন, ২০২৩ )
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২৩ মে - ১ জুন ২০২৩ সময়কালে ইউরোপে তাঁর ১০ দিনের সফর শেষ করলেন। এই সফরে তিনি বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে জার্মানী, ইটালী ও ফ্রান্সে অনেকগুলি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন, বেশ কয়েকটি স্থানে বক্তৃতা দেন, এবং কয়েকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
জার্মানীর বীসবাডেনের টাউন হলে প্রফেসর ইউনূসকে স্বাগত জানান শহরটির মেয়র। শহরটি ইতোমধ্যে নিজেকে একটি সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এজন্য শহরটি গর্ব বোধ করে। বীসবাডেনে তিনটি ইউনূস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলি হচ্ছে: গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব, ইউনূস এনভায়ার্ণমেন্ট হাব এবং ওয়াই-ওয়াই ফাউন্ডেশন। শহরটি নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের আগ্রহ এবং এর বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত হবার জন্য শহরের মেয়র তাঁর বক্তৃতায় প্রফেসর ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রফেসর ইউনূসের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বীসবাডেনের ফাওন মিউজিয়াম (নারী যাদুঘর) এবং রোটারী ক্লাব অব বীসবাডেন রাইন মাইনে প্রফেসর ইউনূস নারীর ক্ষমতায়নের উপর বক্তব্য রাখেন। উল্লেখযোগ্য যে, তিনি এই রোটারী ক্লাবটির সাম্মানিক সদস্য। আরো উল্লেখ্য যে, তাঁর ৮০তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে এবং মানবতার কল্যাণে তাঁর বিপুল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর অনুপস্থিতিতেই ক্লাবটি বীসবাডেনের কেন্দ্রীয় উদ্যানে প্রফেসর ইউনূসের জন্মদিনে একটি বৃক্ষ রোপণ করে। তাঁর এবারের সফরে নগরীর পুরনো আদালত ভবনে, যাকে এখন একটি সামাজিক ব্যবসা ইনকিউবেটরে রূপান্তরিত করা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূসকে স্বাগত জানান হয় যেখানে তিনি বহু সংখ্যক স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা ও সামাজিক উদ্ভাবকের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা প্রদান করেন এবং তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ইটালীর ট্রেনটো নগরী ভ্রমণকালে প্রফেসর ইউনূস ট্রেনটো অর্থনৈতিক উৎসবে মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। অনুষ্ঠান চলাকালে স্টেজেই তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন ইটালীর নেতৃস্থানীয় আর্থিক বিষয়ক পত্রিকা ইল অরে ২৪ এর উপ-সম্পাদক লরা লা পস্তা। সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি তিনি ইটালীর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি, ফ্লাভিয়া ফ্রাজোনি অধ্যাপক ফ্লাভিয়া প্রদি, আনিয়া শ্রিফরিন, এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর জোসেফ স্টিগলিট্জ-এর সাথে বৈঠক করেন।
এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস ইউনেস্কোর ক্রীড়া বিভাগের প্রধানের সাথে বৈঠক করেন এবং ইউনূস স্পোর্টস হাব-এর সাথে ইউনেস্কোর সহযোগিতা বিষয়ক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তিনি জাতি সংঘের “জিরো ওয়েস্ট” কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে জাতি সংঘ পরিবেশ কর্মসূচির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূস এ বিষয়ে জাতি সংঘ মহাসচিবের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর সফরকালে প্রফেসর ইউনূস ড্যানোন-এর প্রধান নির্বাহীর সাথে বৈঠক করেন। গ্রামীণ ও ড্যানোনের মধ্যকার পার্টনারশীপের অধীনে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ-ড্যানোন ফুড্স লিঃ দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে।
প্রফেসর ইউনূস ফ্রান্সের নেতৃস্থানীয় বিজনেস স্কুল “এইচইসি প্যারিস”-এর ১৫তম বার্ষিক সোশ্যাল বিজনেস সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এখন থেকে ১৫ বছর পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি সামাজিক ব্যবসার উপর একটি “ইউনূস চেয়ার” প্রতিষ্ঠা করে এবং একটি সামাজিক ব্যবসা সার্টিফিকেট চালু করে। এই সার্টিফিকেটধারীদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং দারিদ্র বিমোচন বিষয়ক কমিশনার মার্টিন হার্চ, এইচইসি প্যারিস-এর কয়েকজন অধ্যাপক, ফ্রান্সের কয়েকটি নেতৃস্থানীয় কোম্পানীর প্রধান নির্বাহীগণ যাঁরা সোশ্যাল বিজনেস থিংক ট্যাংকের প্রধান নির্বাহী বা সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বব্যাপী স্পোর্টসওয়্যার প্রতিষ্ঠান ডেক্যাটলন এর প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেন যিনি খেলাধুলা ও সামাজিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইউনূস স্পোর্টস হাব এর সাথে যৌথভাবে থাইল্যান্ডে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগো এবং ইনকো-র আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস ইমপ্যাক্ট-২ এর শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ইমপ্যাক্ট-২ পৃথিবীর ৬০টি দেশে সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্যারিস সিটি টাউন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্যবসা উদ্যোক্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনবৃন্দ সহ প্রায় ১,০০০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রফেসর ইউনূস ইউরোপিয়ান কমিশনার অন সোশ্যাল ইকোনমি নিকোলাস স্মিথ এর সাথে বৈঠক করেন যিনি প্রফেসর ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করতে প্যারিসে আসেন। কমিশনার স্মিথ সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসার অভ‚তপূর্ব প্রসারের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে এর ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের উপর জোর দেন এবং ইউরোপিয়ান কমিশনার অন সোশ্যাল ইকোনমি নিকোলাস স্মিথ এর সাথে বৈঠক করেন।
সফরকালে তাঁর বিভিন্ন বৈঠক ও অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস একটি নতুন সভ্যতা তৈরীর আশু প্রয়োনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যা মুনাফা সর্বোচ্চকরণের পরিবর্তে পারস্পরিক যত্ন, সহযোগিতা ও ভাগ করে নেয়ার সংস্কৃতির উপর গড়ে উঠবে। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্তৃক সৃষ্ট বেকারত্বের ভয়াবহ পরিণতির উপর বিশেষভাবে জোর দেন এবং তাঁর অংশগ্রহণকৃত প্রতিটি অনুষ্ঠানে স্বার্থপরতাবর্জিত সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগকে সহায়তা করতে এবং এজন্য সামাজিক ব্যবসা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড প্রতিষ্ঠা করতে আহ্বান জানান। তিনি “৩-শূন্য ক্লাব” গঠনের উপর বিশেষভাবে জোর দেন যা তরুণ সমাজকে শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্ব-ভিত্তিক একটি “তিন শূন্য”র নতুন সভ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে একটি অধিকতর বাসযোগ্য ও টেকসই পৃথিবী সৃষ্টিতে সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করবে।
\
সমাপ্ত