শেষ দিন পর্যন্ত সৃষ্টিশীল থাকতেই জীবন: প্রফেসর ইউনূস
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ(৮ জানুয়ারী ২০১৭ ):
ভারতের বিশাখাপত্তমে অবস্থিত অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ১০ম বার্ষিকী উপলক্ষে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে প্রফেসর ইউনূস বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কীভাবে সৃষ্টিশীল উপায়ে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বৃদ্ধ বয়সের সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টা আসলে বৃদ্ধদের দেখাশোনা করার নয়, বরং সমাজের মঙ্গলের জন্য তারা যেসব বিষয়ে কাজ করতে ভালবাসে সেসব বিষয়ে তাদের কাজ করার ও সৃৃষ্টিশীল থাকার সুযোগ করে দেবার। প্রফেসর ইউসূসের মতে, ‘অবসর’ শব্দটিকেই বরং অবসরে পাঠানো উচিত। একজন তরুণ বা বৃদ্ধ তার জীবনের যে কোনো সময়ে উদ্যোক্তা হতে পারে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিকর ‘অবসর’ শব্দটি ব্যবহার না করে তিনি বরং একে জীবনের ‘দ্বিতীয় পর্ব’ বলতে চান। জীবনের প্রথম পর্বের পর কেউ তার পছন্দমত যে কোনো সময়ে সমাজের মঙ্গলের জন্য তার জীবনের অর্জনগুলো কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় পর্বটি শুরু করতে পারে। চাকরী না খুঁজে বরং চাকরী সৃষ্টি করে একজন তরুণও একাজ করতে পারে।
আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা এখন ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসাগুলোকে অর্থায়ন করতে ব্যস্ত। প্রফেসর ইউনূস যুক্তি দেখান যে, নতুন নতুন সামাজিক ব্যবসাকে অর্থায়ন করার এখনই উপযুক্ত সময়। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় এখনই এ নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। তিনি ভারতের ব্যাংগালোর ও মুম্বাইয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দু’টি সুনির্দিষ্ট সামাজিক ব্যবসা তহবিলের কথা উল্লেখ করেন। পৃথিবীতে সম্পদ কেন্দ্রীকরণের ভয়াবহ প্রবণতাকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতে তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তারা এভাবেই ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসতে পারে।
প্রফেসর ইউনূস আবারো জোর দিয়ে বলেন যে, প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে একজন উদ্যোক্তা এবং অর্থায়ন কখনোই কারো কর্মোদ্দীপনায় সমস্যা হওয়া উচিত নয়। তিনি তাঁর তিন শূন্যর তত্ত্ব--অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণ, যা এই সিম্পোজিয়ামের মূল বিষয়বস্তু--তা বিশদভাবে তুলে ধরেন এবং লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কীভাবে তা অর্জন সম্ভব তা ব্যাখ্যা করেন।
বিকেলে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ক গবেষণা কেন্দ্র তাঁকে অভ্যর্থনা দেয়। এই উপলক্ষে তিনি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে কথা বলেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এই কেন্দ্রের পন্ডিতদের গবেষণাগুলো সার্কের সার্বজনীন লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।
অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নাগেশ্বর রাও ও প্রফেসর ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইউনূস সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রফেসর ইউনূস পরামর্শ দেন যে, কেন্দ্রটি গবেষণা পরিচালনা করা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে পারে। প্রফেসর নাগেশ্বর রাও এতে সম্মত হন এবং কেন্দ্রটি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা প্রফেসর ইউনূসকে অবহিত করেন।
Source: Yunus Centre
Updated Date: 9th March, 2017