নোবেল বিজয়ীর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওবামার চিঠি পেলো ৪ বছরের শিশু

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে রিকগনিশন অব একমপ্লিশম্যান্ট পেয়েছে ৪ বছর বয়সী সুবর্ণ আইজ্যাক বারী। সুবর্ণ এরই মধ্যে ‘ক্ষুদে আইনস্টাইন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

হোয়াইট হাউজের অফিসিয়াল ওই চিঠিতে বারাক ওবামা চিঠিতে লিখেছেন, ‘প্রিয় সুবর্ণ, আশা করছি তুমি তোমার কঠোর প্ররিশ্রম এবং অর্জনের জন্য তুমি গর্ব অনুভব কর। তোমার মতো শিক্ষার্থী আমেরিকায় আরো দরকার, যারা স্কুলে কঠোর প্ররিশ্রম করার চেষ্টা করে, বড় স্বপ্ন দেখে এবং আমাদের সমাজের পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের দেশ অনেক চ্যালেঞ্জ মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে এসব মোকাবেলা করা কোনো ব্যাপারই নয়। তুমি তোমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও, আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার কাছে আমি অনেক বড় কিছু প্রত্যাশা করি।’ প্রেসিডেন্ট ওবামা সুবর্ণের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলেও জানান চিঠিতে।

ভাবছেন কী এমন করেছে এই শিশু, যার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি তাকে চিঠি লিখলেন। হ্যাঁ, তার প্রতিভার কথা শুনলে অভিভূতই হতে হয়। মাত্র দেড় বছর বয়সে সে রসায়নের পর্যায় সারণী তথা ক্যামিস্ট্রি পিরিয়ডিক টেবল মুখস্থ করে ফেলেছে সে। ৩ বছর বয়সে সে লেবুর সাহায্যে ব্যাটারি এক্সপেরিমেন্ট করে। সাড়ে তিন বছর বয়সে খ্যাতনামা একটি কলেজের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ পেয়েছে। এরই মধ্যে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতেও।

ঘটনার শুরু একেবারে ছোটবেলায়। শিশু সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের বেডে জ্বরে কাতরাচ্ছিল। তার বাবা রাশীদুল বারী বললেন, ‘আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনিথিং ইন দ্য ইউনিভার্স’। সুবর্ণ তার বাবাকে পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘ইউনিভার্স অর মাল্টিভার্স?’

কলেজ শিক্ষক রাশীদুল বারী চমকে যান। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না এই সুবর্ণ ৩ বছর বয়সে অংক, পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়নে দক্ষতা দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিবে। সেই সুবর্ণ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুবর্ণর মেধা বিস্ময় সৃষ্টি করেছে সর্বত্র। যে এখনও স্কুলেই যায়নি, সে কীভাবে জ্যামিতি, বীজগণিতসহ রসায়নের জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান দিচ্ছে।

মাত্র দেড় বছর বয়সে রসায়নের পর্যায় সারণীর গল্প শুনিয়েছেন তার বাবা রাশিদুল বারী। তিনি জানিয়েছেন, ওর মা ওকে অংক শেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ সুবর্ণ বলল, ‘ইফ ওয়ান প্লাস ওয়ান ইক্যুয়াল্টো টু, দ্যান টু প্লাস টু ইকোয়াল্টো ফোর এবং এন+এন ইকোয়াল্টো টুএন, তাই না?’ রাশীদুল বারী তখন পাশের রুমে তার ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন। ছেলের এমন প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে রাশীদুল বারী তাকে অ্যাডভান্সড ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্সের লেসন দেয়া শুরু করলেন। আর এভাবেই মাত্র ২ বছর বয়সে সে রসায়নের পিরিয়ডিক টেবিল মুখস্ত করে ফেলল। এ অবিশ্বাস্য কথাটি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বারী সাইন্স ল্যাব’ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিস্ময়কর প্রতিভার কথা।

হইচই পৌঁছায় মেডগার এভার্স কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড পোজম্যানের কানেও। তিনি সুবর্ণের মেধা যাচাই করতে চান। সুবর্ণ পর্যায় সারণীর সবগুলো এলিমেন্ট বলে পোজম্যানকে অবাক করে দেয়। সেদিন তিনি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, ১ বছর পর অর্থাৎ গত ২৫ নভেম্বর আবার তাকে ডেকে পাঠালেন পোজম্যান। এরপর ডাক পড়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগ থেকে। বাবা বারী তাকে নিয়ে যান ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অব আমেরিকা স্টুডিওতে। সেখানে সাবরিনা চোধুরী ডোনা তার ইন্টারভিউ নেন এবং বছরের সেরা কনিষ্ঠ ইন্টারভিউ হিসাবে তারা এটা বাছাই করে ইংরেজী নববর্ষে পুনঃপ্রচার করেছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট করে ফলেছে সুবর্ণ। ডাক পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে।
চট্টগ্রামের সন্তান রাশেদুল বারী উচ্চশিক্ষার জন্যে নিউইয়র্কে আসার পর ব্রঙ্কসের লিমন কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির বারুখ কলেজে অংকের এডজাঙ্ক অধ্যাপক এবং একইসঙ্গে নিউভিশন চার্টার হাই স্কুল ফর এডভান্সড ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্সে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। জেরুজালেম পোস্টে তিনি নিয়মিতভাবে কলাম লিখছেন। সুবর্ণর মা রেমন বারী ব্রঙ্কস কম্যুনিটি কলেজ থেকে একাউন্টিংয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। সুবর্ণর একমাত্র বড় ভাই রিফাত আলবার্ট বারীর বয়স ১২। সেও অসাধারণ মেধার অধিকারী। সপ্তম গ্রেডে পড়ছে এবং ৭ ভাষায় কম্প্যুটার প্রোগ্রামিংয়ে অভ্যস্ত। সে হাইস্কুলে না গিয়েই বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চায়। এজন্যে সে ইতোমধ্যেই ৩ বার এস এ টি প্রদান করেছে।

সুবর্ণর জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল অর্থাৎ গেল এপ্রিলে তার বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে। সুবর্ণ তার বাবার ল্যাবরেটরিতে যাচ্ছে এবং অঙ্কশাস্ত্র ছাড়াও রসায়নের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে। এখনও সে স্কুলে ভর্তি হয়নি।

Source Link: http://www.somoyerkonthosor.com/2016/11/16/64070.htm

Source: Kaler Kantha

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015