এবারের নোবেল প্রাইজ : বিস্ময় ও বিতর্ক

আমরা সবাই জানি, নির্ধারিত কয়েক বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় নিয়মিত। যা অনেকেই জানি না, তা হলো, অর্থনীতির জন্য নোবেল পুরস্কারের বিধান ছিল না ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত। আলফ্রেড নোবেল তার বিপুল অর্থে পুরস্কার প্রদান করার উদ্দেশ্যে যে ‘উইল’ করে গেছেন ১৮৯৫ সালে, তাতে অর্থনীতি বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। নোবেল নাকি বিপুল অর্থের মালিক হয়েও অর্থনীতি পছন্দ করতেন না। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলছেন, ‘তিনি জীবিত থাকলে অর্থনীতিকে নোবেল প্রাইজের আওতার বাইরেই রাখতেন।’ যা হোক, আর উইল করার দীর্ঘ ৭৩ বছর পরে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। তবে নোবেল প্রাইজ কমিটি নয়, এই পুরস্কারটির উদ্যোক্তা নোবেলের দেশ সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংকের তিন শ’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৯৬৮ সালে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানে অবদানের জন্য এই পুরস্কার।’ লক্ষ করার বিষয়, অর্থনীতির পুরস্কারটি নোবেলের ‘স্মরণে’, তবে এটা তার শেষ ইচ্ছামাফিক নয়। অর্থনীতি বিষয়টি যেমন নোবেল প্রাইজের অন্যান্য বিষয় থেকে আলাদা, তেমনি ২০১৬ সালে দু’জন এই পুরস্কার জিতে নিলেন অনেকটা ‘আলাদা’ ধরনের একটা ইস্যুর ওপর গবেষণা করে। সেটা হলো, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে অধিষ্ঠিতদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পাদিত চুক্তি। এক কথায়, এর নাম ‘চুক্তিতত্ত্ব’।
১০ অক্টোবর সুইডেনের রাজধানীতে রয়েল একাডেমি অব সায়েন্সেস ঘোষণা করেছে, এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দু’জন অর্থনীতিবিশারদ- অলিভার হার্ট ও বেংট হমস্ট্রোম। উভয়েই বিশ্বখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় অধ্যাপনা করছেন। অবশ্য তাদের কেউ মূলত আমেরিকান নন। হার্ট ও হমস্ট্রোমের জন্ম যথাক্রমে ব্রিটেন ও ফিনল্যান্ডে।
স্মর্তব্য, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন শান্তির জন্য। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও তাকে সেই বছর এই মহামূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণফোনের মালিক না হলেও ইউনূস সাহেবের সাথে এই টেলিকম প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশের বৃহত্তম এই মোবাইল অপারেটরের মূল স্বত্বাধিকারী নরওয়ের টেলিনর কোম্পানি। একই খাতে স্কান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের আরেকটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান হলো নকিয়া। এবার অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী বেংট হমস্ট্রোম নকিয়া করপোরেশনের সাবেক দীর্ঘকালীন ডিরেক্টর।
এযাবৎ আমরা দেখে আসছি, সাধারণত শান্তি বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে কে বা কারা নোবেল প্রাইজ পেলেন, তা নিয়ে নানা বিতর্ক, মতভেদ ও সমালোচনা হয়ে থাকে। তবে এখন অর্থনীতির বেলায়ও তর্ক-বিতর্ক ও ভিন্নমত কম নয়।
অর্থনীতির জন্য নোবেল প্রাইজ পাওয়ার বিষয়টির চেয়ে অর্থনীতি প্রসঙ্গে খোদ নোবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। এই পুরস্কার ঘোষণার আগমুহূর্তে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে স্টকহোম থেকে। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অর্থসংশ্লিষ্ট গবেষণাকে বিরাট মর্যাদা দিয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, মানবকল্যাণে ব্রতী হয়ে আলফ্রেড নোবেল অন্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবলেও অর্থনীতির কথা মনের ধারে-কাছেও আনেননি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে অবদান রেখে যারা নোবেল বিজয়ী হচ্ছেন ফিবছর, তারা গবেষক ও উদ্ভাবক হিসেবে নিঃসন্দেহে খ্যাতি অর্জন করছেন। অপর দিকে, পুরস্কারটি নিয়ে বিতর্কও লেগে থাকে।
মাত্র গত মাসে পাশ্চাত্যের বাজারে নতুন একটি বই এসেছে। নাম ঞযব ঘড়নবষ ঋধপঃড়ৎ. লেখক হচ্ছেন দুই অর্থনীতিবিদ- অ্যাভনার অফার ও গ্যাব্রিয়েল সোডারবার্গ। তাদের সাফ কথা, ‘সুদক্ষ উদ্ভাবক ও মেধাবী ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেল অর্থনীতির বিষয়ে কোনো পুরস্কার দেয়ার কথা বলেননি। বরং এক পত্রে তিনি লিখেছিলেন, তিনি পুরো অন্তর দিয়ে ব্যবসায়কে ঘৃণা করেন। নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নয়, সোস্যাল ডেমোক্র্যাট।’
এটাকে নোবেলের কিছুটা স্ববিরোধী, কিছুটা অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি বলা গেলেও বাস্তবতা হলো, বিরাট ব্যবসায়ী ও বিপুল অর্থের মালিক আলফ্রেড নোবেল অর্থকে ভয় পেতেন বলেই মনে হয়। তিনি ঋণদাতাদের থেকে দূরে থাকতেন। কারণ, তার বাবা ইমানুয়েল ঋণদাতার হাতে বেশ দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন। অর্থবাজারের নানা ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চাইতেন নোবেল। তার উইলে তিনি বলেছিলেন, তার অর্থসম্পদ যেন ‘নিরাপদভাবে’ বিনিয়োগ করা হয়।
এ তো গেল নোবেল পুরস্কার যার নামে, তার কথা। এবার আসুন, যারা অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন, তাদের কথায়। এই প্রাইজ নির্ধারণ করে যে জুরি বোর্ড, তারা অর্থনীতিকে ‘অর্থহীন’ ভাবছেন না আলফ্রেড নোবেলের মতো। বরং তাদের কাছে দিন দিন বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্ব। তা না হবেই বা কেন? আমরা এত দিন জানতাম, ‘অর্থই যত অনর্থের মূল।’ অথচ বর্তমান বিশ্ববাস্তবতা হচ্ছে, ‘অর্থই যত শক্তির উৎস।’ বিশেষ করে ‘বাজার অর্থনীতি’ যখন দুনিয়াজুড়ে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তখন কথাটা আরো সত্য।
এ বছর অর্থনীতিতে পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে নোবেল কমিটি বলেছে, নানা ধরনের চুক্তি হচ্ছে বিশ্বসমাজে। অনেক ক্ষেত্রে চুক্তিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পক্ষগুলোর সম্পর্কের মাঝে পরস্পরবিরোধী স্বার্থের বিষয় থাকে। তাই চুক্তি এমন হওয়া উচিত, যাতে একই সাথে সবাই সমান লাভবান হতে পারেন। তা সম্ভব হবে কেমন করে- ‘এটা বোঝার জন্য এবার নোবেলজয়ী দুই অর্থনীতিবিদের চুক্তিতত্ত্ব অধ্যয়ন করা দরকার।’ অবশ্য এ বছর নোবেল বিজয়ী দু’জনের একজন অলিভার হার্ট গবেষণা করেছেন স্কুল, হাসপাতাল, কারাগার ইত্যাদি সরকারি না বেসরকারি খাতে থাকা উচিত, সে বিষয়ে। আর নকিয়ার মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সাবেক পরিচালক বেংট হমস্ট্রোমের গবেষণার বিষয়- প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহীর মতো উঁচু পদের ব্যক্তির নিয়োগসংক্রান্ত চুক্তি।
অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার ঘোষণা শুনে ওই দিনই কর্মস্থল এমআইটিতে বেংট হমস্ট্রোম বললেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর বেতনের বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে আছে। এটাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০০১ সালে সুপরিচিত জ্বালানি কোম্পানি এনরনের পতনের একটা বড় কারণ এটাই। এনরনের নির্বাহীদের বেতনসংক্রান্ত চুক্তিতে কোম্পানি আর তাদের স্বার্থের মাঝে পার্থক্য দেখা দিয়েছিল। তিনি দুঃখের সাথে বলেন, যারা বেতন প্যাকেজ তৈরি করেন, তারা সব সময় আমাদের গবেষণার ফলকে গুরুত্ব দেন না। হমস্ট্রোম বলেছেন, বিভিন্ন কোম্পানিতে দেখা যায়, নির্বাহীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ‘যুক্তিসঙ্গত’ থেকে ‘চরম ভয়াবহ’ মাত্রার। আমরা যা জানি বা বুঝি, তার প্রতি কোম্পানি মালিকেরা একটু বেশি কান দেবেন বলে আশা করি।’
এবার ‘আর্থিক ভীতি’র মডেল নিয়ে গবেষণা করে ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডিবভিগ নোবেল পুরস্কার অর্জনের আলোচনায় উঠে এসেছিলেন। সম্ভাব্য বিজয়ীদের মধ্যে নাম ছিল রবার্ট টাউনসেন্ডেরও। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে ঝুঁকি ও বীমা প্রসঙ্গে তার গবেষণা মূল্যবান। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এসব বিষয় গুরুত্ব বহন করলেও নোবেল প্রাইজের জুরি বোর্ড সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে করপোরেট নির্বাহীদের নিয়োগ-বেতনভাতা-অব্যাহতি সম্পর্কিত চুক্তির বিষয়কে। এটাকে করপোরেট অর্থনীতির প্রভাব কিংবা গণমানুষ থেকে দূরবর্তী বিষয় বলে সমালোচনা করা যায়। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রভাব ও প্রাধান্য যে দিনদিন সব দেশে বাড়ছে, তা অস্বীকার করা যায় না।
নোবেল প্রাইজের অর্থমূল্য বর্তমানে ৮০ লাখ ক্রোনার (সুইডিশ মুদ্রা), যা ৯ লাখ ২৪ হাজার ডলারের সমান। বাংলাদেশী টাকায় সোয়া সাত কোটি টাকার মতো। অর্থনীতির জন্য ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ বিজয়ী দুই গবেষক-শিক্ষককে ভাগ করে দেয়া হবে ১০ ডিসেম্বর।
যে দু’জন এটা পাচ্ছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া বেশ চমৎকার। হমস্ট্রোম বলেছেন, ‘নোবেল প্রাইজ পাবো বলে মোটেও তৈরি ছিলাম না। তাই খবরটা আমাকে অবাক করেছে। অবশ্য এখন মনে হচ্ছে, আমি ভাগ্যবান মানুষ।’ অপর দিকে, অলিভার ছিলেন নোবেল পাওয়ার প্রত্যাশায়। তিনি টুইটারে জানালেন, ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে ভাবলামÑ ‘না, এ বছর নোবেল প্রাইজ আমার ভাগ্যে নেই।’ তবে কিছুক্ষণ পরই ফোনে খবর পেলাম নোবেল পুরস্কার পাওয়ার। শুনেই স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলাম। তার পর ছোট ছেলেটাকে জাগিয়ে জানালাম সুসংবাদটি।’
অবশ্য নোবেল বিজয়ী একজন অর্থনীতিবিদ পল ক্রগম্যান বলেছেন, “হার্ট ও হমস্ট্রোম, দু’জনই নোবেল পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তারা কি আগে এটা পাননি?” এ প্রশ্নের কারণ, অর্থনীতির জগতে বেশ পরিচিত এ দু’জনের আরো আগে নোবেল প্রাইজ প্রাপ্য ছিল বলে তাদের গুণমুগ্ধরা মনে করেন।
নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয় বিংশ শতাব্দী শুরু হওয়ার বছরই। অর্থাৎ ১৯০১ সালে। তবে ৬৮ বছর পরে সূচনা হয়েছে অর্থনীতির জন্য এ পুরস্কার প্রদানের। এযাবৎ ৪৮ বার এটা ঘোষণা করা হয়েছে। কেবল একজন নারীই এটি পেয়েছেন, যার নাম এলিনর অসট্রম (২০০৯)। গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন আমেরিকার প্রিন্সটন ভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাঙ্গাস ডিটন। তার বিষয় ছিল ভোগ, ব্যয় ও দারিদ্র্য। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিশেষ করে জোসেফ স্টিগলিৎজ বর্তমান বিশ্বের একজন বিখ্যাত লেখক ও কলামিস্ট।
এএফপি জানিয়েছে, অর্থনীতিতে নোবেল প্রবর্তনের পর প্রথম দুই দশক এই পুরস্কার বিজয়ীদের কেউ অর্থ নিয়ে কোনো গবেষণা করেননি। এটা শুনে কারো কারো এ ধারণা হওয়া একেবারে অযৌক্তিক নয় যে, তাদের অর্থনীতির জন্য পুরস্কার দেয়া ‘অনর্থক’। অবশ্য পরে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন, ১৯৯০ সালে তিনজন, ১৯৯৭ সালে দু’জন আর ২০১৩ সালে তিনজন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন অর্থসম্পর্কিত মূল্যবান গবেষণা করে। অপর দিকে ১৯৬৯ সাল থেকে গত অর্ধশতাব্দীতে পাঁচজন মাইক্রো ইকোনমিক্স বা ব্যাস্টিক অর্থনীতি এবং তিনজন শ্রম-অর্থনীতির ক্ষেত্রে অবদানের কারণে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। আর আটজন এই পুরস্কার পেলেন ইকোনমেটিক্সে গবেষণার জন্য। তবে সর্বাধিক পুরস্কার বিজয়ীরা সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোনমিক্সের গবেষক (৯ জন)।
আলফ্রেড নোবেলের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তির জীবনী লেখা হবে, এটা স্বাভাবিক। তার একজন জীবনীকার বেংট ফ্রেড্রিকসন জোর দিয়ে বলেছেন, নোবেল ছিলেন বিজ্ঞানের মানুষ। তবে আগ্রহের সাথে সাহিত্য অধ্যয়ন করতেন সাহিত্যিক হিসেবে নাম করার আশায়। শান্তির ক্ষেত্রে তার আগ্রহের আন্তরিকতা ছিল স্পষ্ট। তবে আমি মনে করি না- গণিত কিংবা অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিল’।
এযাবৎ বেশ কয়েকজন গণিতবিদ নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে তাদের বেশির ভাগই অর্থনীতির অর্থায়নবিষয়ে গবেষক। আলফ্রেড নোবেলের মনমানসিকতা সম্পর্কে যারা খবর রাখেন, তাদের ধারণা, এসব গণিতজ্ঞের সমীকরণ আর মডেল সম্ভবত নোবেলের ওপর ছাপ ফেলতে পারত না। অর্থবিষয়ক গবেষণা নিশ্চয়ই পরিশ্রমসাপেক্ষ। কিন্তু কারো কারো মতে, এ বিষয়টি নোবেলের পছন্দের তিন বিষয়ের সমান মর্যাদা পায়নি। ওই তিনটি বিষয় হলো- চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন।
আলফ্রেড নোবেল বিজ্ঞানী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার মৃত্যুর পর এক শ’ বছরে কি ‘বিজ্ঞান’ কথাটির অর্থ ও আওতা অনেক বেড়ে যায়নি? এখন শুধু তত্ত্বীয়, ভৌতিক, জৈব, পরিবেশ ও প্রকৌশল বিজ্ঞানই নয়; রয়েছে সামাজিক ও মানবিক বিজ্ঞানও। সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রনীতি, সাংবাদিকতা প্রভৃতি বিষয় সামাজিক বিজ্ঞান এবং ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয় মানবিক বা উদার বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হচ্ছে। তাহলে অর্থনীতি কেন বৃহত্তর অর্থে বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে গণ্য হবে না? অর্থনীতি, অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ও এক অর্থে বিজ্ঞানের আওতায় এসে যাওয়ায় এগুলোও নোবেল পুরস্কার অর্জনের উপযুক্ত বিষয় বলে বিবেচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের লুইসবার্গে অবস্থিত বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বা অর্থায়ন বিষয়ের প্রফেসর স্কিপ ম্যাকগৌন অবশ্য বলেছেন, এটা অধিক বিজ্ঞানসম্মত বলেই প্রতীয়মান; যদিও বাস্তবে এর মাত্রা কিছুটা কম। ২০০৩ সালে তিনি এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গতানুগতিক কঠোর মাপকাঠি মোতাবেক অর্থনীতির অর্থায়নের দিকটি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। কারণ, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাপারে সঠিকভাবে কিংবা নির্ভরযোগ্যতার সাথে পূর্বাভাস দেয়া যায় না।’
এ ক্ষেত্রে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন মাইরন শোলেস ও রবার্ট মের্টন। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত বিনিয়োগ কৌশল হিসেবে তারা যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা এক সময়ে অকার্যকর প্রতিপন্ন হয়েছে।
ব্রাসেলসের ইউনিভার্সিটি লিব্রের প্রফেসর হাভিয়ার দ্য শিমিকেরে বলেন, কেবল অর্থায়ন বা ফিন্যান্সকে দোষ দিয়ে লাভ কী? অর্থনীতির গোটা অঙ্গনের কোনো শাখা নোবেল পাওয়ার যোগ্য কি না, প্রশ্ন তোলা যায়। অর্থনীতির জন্য নোবেল প্রাইজ পেলে ফিন্যান্সের জন্যও পেতে পারেন। আর এটা তো ঠিক, প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মতো বৃহত্তর অর্থনীতির কোনো বিষয়ে সত্যতা বা বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।’

গায়ক পেলেন সাহিত্যে নোবেল
এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন বিশ্বখ্যাত গায়ক-গীতিকার বব ডিলান (৭৫)। এই মার্কিন সঙ্গীতশিল্পীর পরিচয় লেখক বা সাহিত্যিক নয়, সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব রূপে। তাই কথা উঠেছে, গীতিকার হিসেবে যদি সাহিত্যের জন্য নির্ধারিত নোবেল প্রাইজ অর্জন করা যায়, তাহলে নোবেলের শতাধিক বর্ষের ইতিহাসে আর কোনো গীতিকার কি বিশ্বে এমন ছিলেন না, যিনি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য? বব ডিলান নিঃসন্দেহে কিংবদন্তি গায়ক। তিনি গীতিকার হিসেবে অনেক উন্নত মানের নিশ্চয়ই। কয়েক বছর ধরে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীর তালিকাভুক্ত এবং বিশ্বের সুপরিচিত, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের এমন কয়েকজন কবি ও কথাশিল্পী যে এবারো নোবেলবঞ্চিত হলেন। বব ডিলান সাহিত্যের জন্য নোবেল প্রাইজ না পেলেও তার খ্যাতি ও অবদান, প্রতিভা ও কৃতিত্ব সামান্যও কমত না।
পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক এই পুরস্কার পাননি। তাতে তাদের মর্যাদা, খ্যাতি ও প্রতিভা এতটুকুও হ্রাস পায়নি। যেমন- নোবেল প্রাইজের সূচনাকালে ১৯০১ ও ১৯০২ সালে মনোনীত হয়েও নোবেল পাননি লিও টলস্টয়। এ পর্যন্ত ১৩ জন নারী নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, কিন্তু ভার্জিনিয়া উলফের মতো সেরা লেখিকা তা পাননি। নোবেল পুরস্কার পাননি ডব্লিই এইচ অডেনের মতো কবি কিংবা জেমস জয়েসের মতো ঔপন্যাসিক। আর সাম্প্রতিককালে যাদের নাম প্রতি বছর মিডিয়ায় থাকে সম্ভাব্য নোবেলবিজয়ীদের তালিকায়, তাদের একজন হলেন ‘আধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের জনক’ চিনুয়া আচেবে। দীর্ঘ ৫৫ বছর বিশ্বসাহিত্যক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও নোবেল প্রাইজ কমিটির ‘নেক নজর’ পড়েনি এই কৃষ্ণাঙ্গ কথাসাহিত্যিকের দিকে। অবশেষে ২০১৩ সালে তিনি পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলেন। যা হোক, নোবেল প্রাইজ কমিটি কখনো সমালোচিত হলো কাউকে পুরস্কার দিয়ে, কখনো বা কাউকে না দিয়ে।
কয়েক বছর ধরে পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে, নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের সম্ভাব্য তালিকায় জাপানের হারুকি মুরাকামি, সিরিয়ার প্রবাসী কবি আদোনিস, মার্কিন সাহিত্যিক ফিলিপ র‌্যাথ প্রমুখের নাম থাকার কথা। অথচ শেষ পর্�

Source Link: https://goo.gl/7fcBC0

Source: The Daily Nayadiganta

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015