প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, স্বজন পরিজন ও সামাজিকতা

নোবেল জয়ী এই মানুষটির প্রসঙ্গ এলো কেন? কলামিস্ট ও লেখক মুসা খান ঈদের আগের দিন (১২ সেপ্টেম্বর) ফোন করে বললেন, স্যার এসেছেন এসময় চট্টগ্রামে স্যারের কোন প্রোগ্রাম আছে কিনা জানেন? বললাম আমিতো জানিনা। তিনি বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, জানেন না! আবারো বললাম, আমারতো জানার কথা না। মুসা ভাইয়ের সাথে যখন কথা হচ্ছিলো তখন পাশে বসা ছিলেন আরো ক’জন। ইউনূস স্যার ঈদ করতে, তাঁর স্বজন পরিজনদের সাথে একান্তে সময় কাটাতে প্রায় প্রতি ঈদেই চট্টগ্রামে আসেন, গ্রামের বাড়িতে যান, আত্মীয়-স্বজন, সুহৃদ বন্ধুদের সাথে দেখা করেন। মনের কথা প্রাণের কথা বিনিময় করেন, আড্ডা দেন, শৈশব কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। পুরানো বন্ধুদের খোঁজ খবর রাখেন। তাঁরা কে কোথায় আছেন সে তথ্য নিয়ে সুখ অনুভব করেন, দুঃখে হন সহমর্মী। পাশে বসা বন্ধুরা বলে উঠলেন, তিনি গ্রামে আসার সময় পান কেমন করে?

: এই প্রশ্নের উত্তরটা কেমন করে দেবো?

: নোবেল জয়ী এই মানুষটি নাড়ি পোঁতা রয়েছে চট্টগ্রামের মাটিতে। পৃথিবীর যে অংশেই যান না কেন চট্টগ্রামের মাটির গন্ধ তাঁকে খুবই আকর্ষণ করে। তিনি বিশ্বাস করেন নিজের জন্ম স্থান এবং বেড়ে উঠা শহর চট্টগ্রাম তাঁর নিজের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে রয়েছে। এগুলোর টানকে অস্বীকার করলে কি উনি বিশ্বনাগরিক হতে পারতেন? এই মানুষটির জীবন কর্ম পড়ে এবং জেনে স্পস্ট ধারণা জমেছে যে জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে তিনি অন্যের মঙ্গল কামনায় কাটাচ্ছেন। কেমন করে মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করা যাবে, কেমন করে দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব সৃষ্টি করা যাবে, কেমন করে তরুণদের তৈরি করে আগামী বিশ্ব উপযোগী করা যাবে, কেমন করে মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো যাবে এগুলো নিয়ে তিনি চিন্তা করেছেন। চিন্তাকে বাস্তবায়ন করছেন। তাঁর চিন্তাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক আওতায় এনে তিনি তাঁদের অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল মানুষদের সবল করতে চাইছেন। তাঁর চিন্তাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক আওতায় এনে তিনি তাঁদের অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল মানুষদের সবল করতে চাইছেন। তাঁর তত্ত্ব কথাগুলো সর্বমহলে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মাঝে ব্রেইন স্টর্মিং সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। একের ব্রেইন স্টর্মিংগুলো অসংখ্যজনের ইন্টারএ্যাকশানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এই মহান মানুষটির সাথে মিশে বুঝতে পারলাম তিনি কল্পনা বিলাসী মানুষ হলেও তাঁর কল্পনা হচ্ছে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য এবং তিনি কল্পনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করে বিশ্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজটিই করে যাচ্ছেন। স্যারতো সুস্থ চিন্তার সাথে সময়ের সমন্বয় ঘটান। সময়ের কাজটি সময়মতো শেষ করেন এবং মানুষকে মানুষের মর্যাদায় দেখেন। আর সেজন্যই তিনি সাধারণ পোশাকের অসাধারণ মানুষ।

: নোবেল পুরস্কার গ্রহণের সময়টির কথা ভাবুনতো?

: সারা বিশ্বের মিডিয়া তাঁর দেহের উপর, পোশাকের উপর, মুখের উপর। তিনি নির্বিকার। সে সাধারণ মানের পোশাক। সেই সস্তা দামের ফতুয়া, একেবারে সাধারণ মানের প্যান্ট, দেহে ছিলো একটি কটি, পায়ে ছিলো একজোড়া সেন্ডেল। এই সাধারণ বেশেই তিনি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ মঞ্চে। ভাবা যায়? হ্যাঁ, চাটগাঁইয়া ছেলে, বিশ্ববিজয়ী মনীষী প্রফেসর ড. ইউনুস বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন ৩০ লক্ষ শহীদের স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে তিনি দেশের জন্য সম্মান গ্রহণ করেছেন এই সাধারণ পোশাকে। একই সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের নারী প্রতিনিধি দলও নোবেল গ্রহণ করেছেন এমনি সাধারণ মানের পোশাক পরে। তাঁরা প্রমাণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন খাঁটি মানুষ, খাঁটি বাঙালি এবং দেশের জন্য তিনি নিবেদিত। যাঁরা তাঁকে জানেন, চেনেন এবং মিশেছেন তাঁরা এই কথাগুলোর সাথে অবশ্যই একমত হবেন। স্যারকেতো দেখছি সেই আমাদের ছোটবেলায় ছাত্র অবস্থা থেকেই। এখনো দেখছি। তখন তিনি ছিলেন আমাদের স্যার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এখনতো তিনি নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরমধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেক কিন্তু মানুষটি মধ্যে জ্ঞানের আরো বিকাশ ঘটেছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো তিনি এখনো মুহাম্মদ ইউনূস বা ইউনূস স্যার হিসেবেই রয়েছেন। কোন পরিবর্তন তো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শুধু মননের বিষয়ে বিশ্বকে তিনি সামাজিক ব্যবসার আওতায় এনে দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

: নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস স্যারতো এখন গবেষণার বিষয়, চর্চার বিষয়। এখনতো বিশ্বের দেশে দেশে সে চর্চাই হচ্ছে।

: এটাতো এখন আার লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। যাঁরা তাঁর দর্শনকে জেনে এগুচ্ছেন তাঁরা কিন্তু একটি নতুন দারিদ্রমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। আর কিছু মানুষ আছেন তাঁরাতো স্যারকে শুধুই ছবির ফ্রেমের মধ্যে বন্দী করে রেখেছেন। এই দুই ধরনের মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন তাঁকে যারা গবেষণা করে, চর্চা করে আগামী প্রজন্ম সৃষ্টি করছেন। চেষ্টা করছেন একটি সুন্দর দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করার। বিশ্বাস নিয়েই বলছি তাঁর দর্শনকে ধারণ করতে পারলে একটি সুন্দর বিশ্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব নয়। স্যারতো বলছেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজির সৃষ্টি করে ভিক্ষুকের হাতকেও সবল করা যায়। বড় পুঁজির প্রয়োজন নেই সে কথাতো বলা যাবে না, তবে বড় পুঁজির মানুষরা যদি সামাজিক ব্যবসার কাজ শুরু করেন তাহলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে এবং বাড়বে স্বাবলম্বী মানুষের সংখ্যা। সামাজিক ব্যবসার কাজের সাথে জড়িত থেকে বুঝতে পারছি যে, ১০ হাজার বা ১৫ হাজার টাকার পুঁজি কিন্তু বড় ব্যবসার মূল ভিত্তি হতে পারে। সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে এগুলে এবং সে আলোকে সামাজিক ব্যবসার উদ্যো্‌গ নিলে মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আসতে বাধ্য। এটা নোবেলজয়ী ইউনূস স্যার প্রমাণ করেছেন।

 

Source Link: https://goo.gl/lE4Th5

Source: Dainik Azadi

Updated Date: 9th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015