Agent banking provides microcredit service to the people

১২ বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স গ্রহণ, কার্যক্রম শুরু ৬ ব্যাংকের 

 

রহিম শেখ ॥ ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। সারাদেশে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এ সেবা। এর মাধ্যমে ননব্যাংক এজেন্টের মাধ্যমে এ্যাকাউন্ট খোলার ফরম প্রক্রিয়াকরণ, এ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয়া ও উত্তোলন সুবিধা, অর্থ স্থানান্তর, বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্সের অর্থ তোলা, ছোট আকারের ঋণ বিতরণ ও ঋণের কিস্তি আদায়, বিদ্যুত ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক। এ মাধ্যম ব্যবহার করে সেবা নেয়া মানুষের সংখ্যা প্রতি মাসেই বাড়ছে। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। সর্বশেষ তথ্য মতে, গত এপ্রিলে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ৩৫৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় নিয়োগ পাওয়া ৪১৯ জন এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ ব্যক্তি এ অর্থ লেনদেন করেছেন।

জানা গেছে, কোন ব্যাংকের শাখা নেই এমন পল্লী একালাগুলোতে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিধিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। নীতিমালায় বলা হয়, এজেন্টের কাছ থেকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর নগদ অথগ্রহণ করতে পারবেন গ্রাহক। এক হিসাব থেকে আরেক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করতে পারবেন।

ব্যাংক হিসাবে কত টাকা জমা রয়েছে তাও জানা যাবে। এছাড়া এই সেবার আওতায় ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ, ঋণের জন্য আবেদন, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের আবেদন করার সুযোগ পাবেন গ্রাহক। এ সেবার মাধ্যমে বীমার প্রিমিয়ামও জমা দেয়া যাবে। তবে এজেন্টের মাধমে ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে না। এর জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংকের নিকটস্থ কোন শাখায় যেতে হবে। এজেন্ট কোন চেক বইও ইস্যু করতে পারবে না বা কোন ব্যাংক কার্ডও ইস্যু করতে পারবে না। এজেন্ট বিদেশী মুদ্রা সংক্রান্ত কোন লেনদেন করতে পারবে না। এজেন্টদের কাছ থেকে কোন চেকও ভাঙানো যাবে না। এজেন্টরা মোট লেনদেনের ওপর কমিশন পাবেন। তবে এজেন্সি পেতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা থাকতে হবে। পাশাপাশি এক লাখ টাকা জামানত দিতে হবে ব্যাংককে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো দ্রুত প্রসার না হলেও এ সেবাটির ভবিষ্যত সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল। কারণ সময় ও খরচ দুই-ই সাশ্রয় হওয়ায় বর্তমানে ব্যাংকগুলো এ সেবা সম্প্রসারণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধা পাওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ছে। জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর পর থেকেই এ সেবায় ননব্যাংক এজেন্ট শাখা বৃদ্ধির সঙ্গে গ্রাহক ও লেনদন দুই-ই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গত মার্চ মাসে লেনদেন ছিল ৩৪১ কোটি টাকা। তার আগের মাসে লেনদেন হয় ৩১৪ কোটি টাকা। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে এভাবে লেনদেন বেড়ে গত এপ্রিলে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে মোট এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৯ ব্যক্তি ২ লাখ ২২ হাজার ৩৮৯টি লেনদেনের মাধ্যমে এসব অর্থ উত্তোলন ও জমা করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ঘোষিত নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ দেয়া হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আগের মতোই শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হবে। দেশী ফল চাষে উৎসাহ দিতে চলতি অর্থবছর থেকে সারাবছর পেয়ারা চাষে ঋণ দেয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে। এগুলো হলো অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এ কার্যক্রম শুরু করেছে। এর বাইরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংকও এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ফরাছত জনকণ্ঠকে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমরা খুব সাড়া পাচ্ছি। এ সেবার মাধ্যমে প্রতিদিনই গ্রাহক বাড়ছে, ফলে আমানতও বাড়ছে। তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণেই আমরা গ্রাম-গঞ্জে যেতে পারছি। যারা কোনদিন অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে আসেনি, তাদের কাছে ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দিতে পারছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্যই হলো ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে যাওয়া এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে শামিল করা।

এজেন্ট হতে পারেন যারা ॥ কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, আইটিভিত্তিক আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসির মালিক, চেইন শপ, পেট্রোল পাম্প বা গ্যাস স্টেশনের মালিক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অফিস, এমআরএর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কুরিয়ার ও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র এজেন্ট হতে পারে। এজেন্ট ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান ও আমানত সংগ্রহ, নির্দিষ্ট হারে অর্থ লেনদেন ও সুবিধাভোগীর কাছে রেমিটেন্সের অর্থ পৌঁছে দিতে পারে।

এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহক ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাভোগীর অর্থ প্রদান, এ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স জানা ও এ্যাকাউন্ট ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া এজেন্টরা যে কোন পরিমাণের ঋণ আবেদন, ক্রেডিট ও ডেভিট কার্ডে আবেদন ফরম ও চেক জমা নিতে পারে।

 

 

প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৬
 

 

 

Source Link: https://goo.gl/Zd55IU

Source: Daily Janakantha

Updated Date: 12th March, 2017

Related Publications

Yunus Social Business Week launched in China...

Published Date: 15th October, 2015

Grameen China to set up branch in Shenzhen ...

Published Date: 16th October, 2015